চেয়ারম্যানের বিরূদ্ধে দুর্নীতির ১২ অভিযোগ
সরাইলের পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাউছার হোসেনের বিরূদ্ধে দায়ের করা ১২টি দুর্নীতির তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) ইউনিয়ন পরিষদে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ প্রহরায় চলে এই তদন্ত। ইউপি সদস্যসহ শতাধিক লোক স্বাক্ষী দিলেও পরিষদের বাহিরে ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক লোক অবস্থান করছিল। কিছু লোক পক্ষে কথা বললেও চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ডে অধিকাংশ লোকজনই ক্ষোভে ফেঁটে পড়েন। তবে চেয়ারম্যান বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের সুযোগ না দেওয়ায় আমার বিরূদ্ধে এটা গভীর ষড়যন্ত্রের বহি:প্রকাশ।
সরেজমিনে তদন্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তদন্তের দিনক্ষণটি আগেই জানা ছিল ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রামের নারী-পুরুষরা জড়ো হতে থাকে পরিষদে ও এর আশপাশে। এক সময় হাজারো মানুষের ভীড় জমে। তদন্ত কর্মকর্তা সরাইল উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া যথা সময়ে তদন্ত কাজ শুরূ করেন। ইউনিয়ন পরিষদের ৩ জন মহিলাসহ মোট ১২ জন সদস্যের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। পরে তাদের সঙ্গে আসা ভুক্তভোগীদের স্বাক্ষীও গ্রহন করেন। চেয়ারম্যানের নানা কর্মকাণ্ডে স্বাক্ষী দিতে আসা লোকজনের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছিল।
উল্লেখযোগ্য অভিযোগ ছিল জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, মৃত্যুর সনদ প্রদানে ও সরকারি নলকূপ বসানোর কাজে ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত টাকা আদায়। পরিষদের সদস্য ও সুবিধাভোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও কোনো বিষয়ে পাত্তা না দেওয়া। ভুয়া প্রকল্প বা একই প্রকল্প একাধিকবার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা।
স্বাক্ষী দিতে আসা ভূঁইশ্বর গ্রামের রাশিদ মিয়া (৪৮) বলেন, উদ্যোক্তা মিঠু চেয়ারম্যানের স্বজন। ৩টি জন্ম নিবন্ধনের জন্য আমার কাছ থেকে ২৪০০ টাকা নিয়েছে। একই গ্রামের রেজিয়া (৭৫) বলেন, নাতির জন্ম নিবন্ধনের জন্য আমাকে ১৪০০ টাকা গুণতে হয়েছে। পরমানন্দপুর গ্রামের হাফেজ সাঈদ (২৭) বলেন, একটি নাগরিকত্বের সনদের জন্য চেয়েছেন ৫০০ টাকা। নেয়নি। পাকশিমুল গ্রামের মতিউর রহমান (৬৫) বলেন, ১টি ওয়ারিশ নামা নিতে চেয়ারম্যানের হাতে আমাকে নগদ ২৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। কথা বললেই কাজ না হওয়ার হুমকি। কালিশিমুল গ্রামের শাহ পরাণ (৪০) জানান, দুই মাস আগে ১টি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য এসেছিলাম। ২৬০০ টাকা চেয়েছেন। তাই এখনো নেইনি।
এ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য মলাই মিয়া বলেন, শুধুমাত্র অনিয়ম আর দুর্নীতি করে টাকা কামাই করছেন। সাধারণ জনগণকে পরিষদে আসতে নিষেধ করেন। আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। সবকিছু থেকে দ্বিগুণ, তিনগুণ টাকা আদায় করছেন। মানুষকে হয়রানি করছেন। এভাবে একটি পরিষদ চলতে পারে না।
আরেক ইউপি সদস্য জুনাঈদ মিয়া (২৭) বলেন, ইউপি সচিব মিঠুকে ভিন্ন নামে একাধিক কমিটির সদস্য করছেন। সম্পাদক করেছেন ওই ব্যক্তি জানেনই না। এভাবে ভূয়া কমিটি দিয়ে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে কোন কাজ না করেই আত্মসাৎ করছেন চেয়ারম্যান। আমরা উনার অপসারণ চাই।
তবে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান কাউছার হোসেন বলেন, অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ সকল অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা। আমি চোখে না দেখে জন্ম নিবন্ধনসহ কোনো সনদ দেই না। কারণ জালিয়াতি হলে পরে দায়িত্ব নেবে কে? তারা শুরু থেকেই লুটপাটের চেষ্টা করছেন। আমি সেই সুযোগ দিচ্ছি না। কারণ আমি ইউনিয়নবাসীর কাছে স্বচ্ছ কাজ ও সেবা দেওয়ার অঙ্গিকার করে এসেছি। আর এ জন্যই আমার বিরূদ্ধে কঠিন এই ষড়যন্ত্র।
এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া বলেন, সকল অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বক্তব্য নোট করেছি। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রমাণ চেয়েছি। এই অভিযোগের উপর স্বচ্ছ সুন্দর একটি প্রতিবেদন ইউএনও মহোদয়কে দেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন নির্বাচিত ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের বিরূদ্ধে ১২টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
এসআইএইচ