সরকারি এক বিদ্যালয়েই ১৬ শিক্ষকের পদ শূন্য
উচ্চ বিদ্যালয়টি সরকারি অথচ সেখানে গণিত ও জীববিজ্ঞানের একজনও শিক্ষকও নেই। শুধু তাই নয়, ২৭ জন শিক্ষকের পদের ১৬টিই শূন্য। খাগড়াছড়ির রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের চিত্র এমনই। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিনে জানা গেছে, ১৯৫২ সালে ৩ একর ২০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয় এ বিদ্যালয়। ১৯৬৮ সালে সরকারিকরণ করা বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমানে ২৭ জন শিক্ষকের স্থলে আছেন মাত্র ১১ জন। ১৬ জন শিক্ষকের পদই শূন্য। বর্তমানে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৭০০। গণিত শিক্ষকের তিনটি পদ থাকলেও একজন শিক্ষকও নেই। একই অবস্থা জীববিজ্ঞান বিষয়েরও। দুটি পদ থাকলেও শিক্ষক নেই একজনও। এ ছাড়া বাংলা ও ইংরেজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। এই দুই বিষয়ে পদ রয়েছে ৮টি, শিক্ষক আছেন ৪ জন। অর্ধেকই শূন্য। বাকি বিষয়গুলো কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে চললেও চরম ভোগান্তি ও শঙ্কায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া ভূগোল, চারুকলা, কৃষিবিজ্ঞান, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষকের পদ শূন্য অনেক দিন ধরেই। বিজ্ঞান বিভাগে শুধু ভৌতবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক আছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অভিভাবকেরা সন্তানদের ভবিষ্যৎ পড়াশোনার চিন্তায় খুবই উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায়, অভিভাবকদের দাবি পার্বত্য চট্টগ্রামের এই বিদ্যালয়ে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হোক।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল কাদের বলেন, মাউশির মহাপরিচালককে (ডিজি) শিক্ষক স্বল্পতার বিষয় জানিয়েছি। দেশব্যাপী সম্প্রতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বেশকিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও সমতলের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে পড়া পাহাড়ের এই বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ে এখানে শিক্ষক দেওয়া না হলে প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার মানোন্নয়নে করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। অতিথি শিক্ষক দিয়ে কতটা শূন্যস্থান পূরণ করা যায়?
তিনি আরও জানান, রংপুর বিভাগে শূন্য পদের তুলনায় অতিরিক্ত শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। ওই অতিরিক্ত শিক্ষকদের এখানে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব।
বাংলা বিভাগের শিক্ষক মো. হারুনুর রশীদ জানান, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটছে।
অবিভাবক বেলাল হোসাইন উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, সন্তানদের পড়ালেখার ভবিষ্যৎ নিয়ে এই অঞ্চলে বসবাসরত প্রত্যেকেই চিন্তিত। পাহাড়ি এলাকা দরিদ্রপ্রধান হওয়ায় আর্থিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠী বাইরে নিয়ে তাদের সন্তানদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেন না। এরকম পরিস্থিতিতে গরিব মা-বাবার প্রশ্ন এটাই কী সন্তানদের ভবিতব্য!
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিত্য অনুপম রুদ্র ও ওমর ফারুক মাহির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞান বিভাগের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। বাইরের বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ে সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। অনেক সময় কলেজের বড় ভাইদের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। এই অবস্থায় মানসম্মত শিক্ষা লাভ কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিজ্ঞানের শিক্ষক না থাকায় ব্যবহারিক ক্লাস বুঝতে সমস্যায় পড়তে হবে বলে জানায় তারা।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল কাদের বলেন, বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বেশকিছু অংশ প্রায় খোলা। সীমানাপ্রচীর থাকা খুব দরকার। বাইরের লোকজন সহজেই বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের ভেতর ঢুকে পড়ছে। সীমানা প্রাচীরের উত্তর পাশে তারকাঁটা কেটে আশপাশের লোকজন ভেতরে ময়লা-আর্বজনা ফেলে প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ নোংরা করছে। স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও এই অপতৎপরতা বন্ধ করা যায়নি। এখানে মাদকাসক্তদের আনাগোনার খবরও এই প্রতিনিধিকে জানান তিনি।
এ বিষয়ে রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ডিও লেটার নিয়ে এখানে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে প্রচেষ্টা চালাবেন। অন্যান্য বিষয়গুলোর খবর নিয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।
রামগড় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা খোন্দকার মো. ইফতিয়ার উদ্দিন আরাফাত জানান, শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক দেবময় ভট্টাচার্যকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে প্রচেষ্টার কথা জানান তিনি।
প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নেই এখানে। বিদ্যালয়ে একটি শিক্ষার্থী মিলনায়তন বড় প্রয়োজন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু কাওসার বলেন, দেশব্যাপী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও এই স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এসএন