টানা ছুটিতে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ভিড়
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র শহর কক্সবাজারে ভিড় করেছে লাখো পর্যটক। টানা ছুটি পাওয়ায় ছুটে আসছে এসব পর্যটকরা। তীব্র গরম উপেক্ষা করে কেউ বালিয়াড়িতে কেউবা কিটকিট ছাতার নিচে বসে উপভোগ করছে সমুদ্র। আবার অনেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে স্নানে ব্যস্থ। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব সুখ যেন এখানেই সন্নিহিত।
শুক্রবার (০৭ অক্টোবর) সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, ৩ কিলোমিটার সাগরতীর জুড়ে লাখো পর্যটকের ভিড়। তীব্র গরম থেকে বাঁচতে সবাই নেমে পড়েছেন নোনাজলে। সাগর কিছুটা শীতল। ঢেউয়ের তীব্রতা কম। তাই ঢেউয়ে মেতেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। কেউ সামান্য পানিতে করছে খেলা, আবার কেউ কেউ বালিয়াড়িতে পরিবার-পরিজন নিয়ে মেতেছেন আনন্দে।
শরমিন্দা নামে এক পর্যটক বলেন, প্রচণ্ড গরম। তারপরও টানা ছুটিতে কক্সবাজার আসলাম বাচ্চাদের নিয়ে একটু ঘুরে বেড়ানোর জন্য। ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা সেমজিয়া খানম বলেন, অনেক বছর পর কক্সবাজার বেড়াতে আসা, খুবই ভালো লাগছে৷ তবে তীব্র গরম।
আরেক পর্যটক ফয়সাল উদ্দিন বলেন, টানা ছুটি পড়লে সবাই একসাথে যায়। তাই বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজারে আসলাম। খুব মজা করছি। দুই দিনের ছুটিতে কক্সবাজার আসলাম। সমুদ্রে গোসল করেছি, এরপর মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে যাব। এই দুই দিন কক্সবাজারে বেশ আনন্দ করব। তবে সবকিছুর দাম একটু বাড়িয়ে নিচ্ছে।
শফিক আহমেদ নামে এক পর্যটক অভিযোগ করে বলেন, বেশি পর্যটক আসায় হয়তো পর্যটন ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে উপলব্ধি করছি হোটেল থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ, বার্মিজ পণ্যের দোকান ও যানবাহনে আদায় করা হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক রিফাত বলেন, গত ৪ দিন আগে বান্দরবান থাকাকালীন কক্সবাজারের ২৫টা হোটেল অনলাইনে বুকিংয়ের জন্য দেখেছি কিন্তু কোনো হোটেলই পায়নি। শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার হিলটন রুম পেয়েছি, তবে এক রুম এক রাতের জন্য ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু এর আগে এই হোটেলে অনেকবার রাত্রিযাপন করেছি মাত্র ২ হাজার টাকা ভাড়ায়। টানা ছুটিতে মানুষ বেশি এসেছে তাই হোটেল কর্তৃপক্ষ এভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
আরেক পর্যটক তৌহিদ বলেন, টানা ছুটি কিংবা কোনো উৎসব হলেও কক্সবাজারের হোটেল, রিসোর্ট বা গেস্ট হাউসগুলো কয়েকগুণ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তার সঙ্গে রেস্তোরা থেকে শুরু বার্মিজ পণ্যের দোকান ও যানবাহনের চালকরা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে মেতে উঠে। আবার দু-ব্যবহার করতেও ভুলে না। তবে এসব বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেয়া দরকার।
কলাতলী আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, পর্যটকদের সুবিধার্থে এখনও হোটেল ভাড়ায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তবে অভিযোগ উঠেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাবার হোটেল, রেস্তোরাঁয় পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে। তাছাড়া রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পর্যটকদের।
মুকিম আরো জানান, কক্সবাজারে ৫২৬টি হোটেল মোটেল রিসোর্ট গেস্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন রাতযাপন করতে পারে এক লাখ ২০ হাজারের মতো পর্যটক। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ বলেন, টানা ৪ থেকে ৫ দিনের সরকারি ছুটি রয়েছে। তাই এ ছুটিকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছে। সুনির্দিষ্টভাবে সংখ্যা না জানলেও বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি কক্সবাজারে লাখো পর্যটক অবস্থান করছে।
তিনি আরও বলেন, হোটেল মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ জেলা প্রশাসনের কাছেও এসেছে। এ ব্যাপারে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছে, নির্দিষ্ট ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত কোন ভাড়া নেয়া হচ্ছে না, তবে ছাড় কম দেয়া হচ্ছে এই ধরনের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা। তবে এব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে দেয়া হচ্ছে, যদি সুনির্দিষ্ট ভাড়ার বাইরে কেউ যদি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি-মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএজেড