১০ লাখ টাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি!
ফেনীর সোনাগাজীতে প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন মাত্র ৪২ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একটি চক্র নিজাম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির কাছে গোপনে বিক্রি করে দিয়েছে ভবনটি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজমান। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রবিবার বিকালে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ইউএনও। নিলাম কমিটির সদস্যরা একে অপরকে দুষলেন আর অনিয়মের কথা স্বীকার করে নিলাম বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, ইউএনও অফিস ও উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের সোনাগাজী মাদরাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতৃন ভবন নির্মাণ কাজের দরপত্র ঘোষণা হয়। নতুন ভবন নির্মাণের নিমিত্তে পুরাতন ভবনটি ভাঙার জন্য গোপনে নিলামের জন্য উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের মাধ্যমে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭৪১টাকা প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সেখানে সরকারি কোষাগারে ভ্যাট ও আয়কর সহ মাত্র ৪২ হাজার ৯৪০ টাকা জমা দেয়া হয়েছে। বাকী ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮০১ টাকা ভাঙার খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মনজুরুল হক বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদান করেছি বেশি দিন হয়নি। আমাকে ভুল তথ্য দিয়ে কমিটির সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই শিক্ষা অফিস আমার কাছ থেকে নতুন ভবন ভাঙার কার্যাদেশ নিয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। মঙ্গলবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলীকে ডাকা হয়েছে। তাদের মতামত ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে অনিয়মের সত্যতা মিললে নিলাম বাতিল করা হবে। প্রাথমিকভাবে অনিয়মের সত্যতা মিলেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নজরুল ইসলাম অনিয়মের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্। অসুস্থতার মধ্যেও আমি গত মাসে কাজে যোগদান করেছি। আমার অফিসের উচ্চমান সহকারি লাকি বালা দাস ও আমার আরেক সহকর্মী ভুল তথ্য দিয়ে গোপনে আমার মাধ্যমে কাজটি করিয়েছে। আমি এই প্রক্রিয়ায় হারাম একটা টাকাও লাভবান হয়নি। ইউএনওর সাথে আলোচনা করে নিলাম বাতিল করা হবে।
নিলাম কমিটির সদস্য ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ূন কবির অনিয়মের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর প্রতিবাদও করেছি। এর জন্য দায়ী উপজেলা প্রকৌশল ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এ অনিয়মে আরো কতিপয় ব্যক্তি জড়িত। বর্তমানে আমি তিন মাসের ট্রেনিংয়ে আছি। কমিটির অপর সদস্য উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন খানকে ট্রেনিংয়ে থাকায় তাকে বারবার চেষ্টা করে এবং মোবাইল ফোনেও পাওয়া যায়নি।
তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, এটা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কাজ। অনিয়ম করলে শিক্ষা অফিস করেছে। উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে স্টিমেট চেয়েছে। তা করে দেয়া হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, প্রচার ও প্রচারণার বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের।
এ ব্যাপারে নিজাম উদ্দিন মাসুদের মোবাইল ফোনে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন এবং বলেন বিষয়টি পরে জানাবেন।
এ ব্যাপারে পৌর কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন নয়ন বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে নিজাম উদ্দিনের কাছে ভবনটি বিক্রি করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। গোলাফ মাওলা নামে এক ব্যক্তি সাড়ে সাত লাখ টাকা দিয়ে ভবনটি কিনতে চেয়েছিলেন। কিস্তু তার কাছে চাওয়া হয়েছিল সাড়ে আট লাখ টাকা। কিন্তু এখন জানতে পারলাম রাষ্ট্রীয় কোষাগারে মাত্র ৪২ হাজার টাকা যোগ হয়েছে। তাহলে বাকী টাকা গেল কোথায়?
এএজেড