নাটোরে নির্বাচনী দ্বন্দ্বে ভাঙচুরের অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
নাটোরের সিংড়া উপজেলার ইটালী ইউনিয়নের পাকুরিয়া গ্রামে নির্বাচনী দ্বন্দ্বে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে বাড়ি ও দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলামসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ২৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন মুক্তালাল চক্রবর্তী।
ভুক্তভোগী মুক্তালাল জানান, বাড়ির ৪টি কক্ষ ও ৩টি দোকান ছাড়াও পাশের কয়েকটি দোকান ঘর ভেঙেছে দুর্বৃত্তরা। গত ইউপি নির্বাচনে ওই এলাকার দুইজন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এরই মধ্যে স্থানীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগ নিয়ে শুরু হয় নতুন উত্তেজনা। পুরাতন আর নতুন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় হুকুমদাতা হিসেবে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ মোট সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক তিনি।
সিংড়া থানার ওসি নূর এ আলম সিদ্দিকী জানান, ভুক্তভোগী মুক্তালাল চক্রবর্তী বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় স্থানীয় চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম ছাড়াও সাবেক সদস্য আলিফ ও তার অনুসারীদের নাম রয়েছে।
মামলার বাদী মুক্তালাল চক্রবর্তী দাবি করেন, তিনি ২০০৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া ২২ বছর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত নির্বাচনে তিনি ওই ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কাজ করেন। অপরদিকে ওই চেয়ারম্যান সমর্থন দেন সাবেক সদস্য আলিফকে। ওই সমর্থন ও ভোটে কাজ করার জেরে চেয়ারম্যান ও আলিফ তার উপর ক্ষুব্ধ হন।
তিনি জানান, তার বসতবাড়ির পাশে আরও একটি বাড়ি করে তিনটি রুম ভাড়া দিয়েছেন। একটি রুমে তার আইনজীবী ভাই চেম্বার করেছেন। ভাড়ার একটি রুমে নির্বাচিত ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর অফিস করেছেন। জাহাঙ্গীরকে অফিস করতে ভাড়া দেওয়ায় তার উপর রাগ আরও বেড়ে যায় ওই চেয়ারম্যান ও আলিফের।
মুক্তালাল আরও জানান, গত রবিবার স্থানীয় মসজিদে ইমাম নিয়োগ করেন আলিফ। এনিয়ে প্রতিবাদ করলে জাহাঙ্গীর ও তার অনুসারীদের সঙ্গে আলিফ ও তার অনুসারীদের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। সোমবার বিকাল ৩ টার দিকে একে একে লোক জড়ো হতে থাকে তার ওই ভাড়া দেওয়া বাড়ির সামনে। এক পর্যায়ে তিনি বাড়ি থেকে পাওনাদারদের দেওয়ার জন্য ১ লাখ টাকা নিয়ে বের হলে আলিফ ও তার অনুসারীরা তাকে ধরে ওই টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। এসময় তাকে আঘাত করার চেষ্টা করলে তিনি দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকেন। এসময় উত্তেজিত হয়ে তারা তার ওই ভাড়াবাড়িতে হামলা করে। এসময় তার ওই বাড়ির ভাড়া দেওয়া সব কক্ষ, দোকান ছাড়াও জাহাঙ্গীরের অনুসারী পাশের দুটি চা-স্টল, একটি কসমেটিক্স দোকান, একটি সেলুন ও একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় আলিফ ও তার অনুসারীরা।
ওই হামলা বন্ধে মুক্তালাল চেয়ারম্যানকে ফোন করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান বলেন এতদিন ওরা করেছে এখন আমি করছি, ঠেকান। কোন নেতা আছে ডাক দেন, তাকে আজ দেখব। নিরুপায় হয়ে তিনি আইসিটি প্রতিমন্ত্রীকে জানালে তিনি দেখছি বলে রেখে দেন। বাধ্য হয়ে ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ার পর প্রায় ৬টার দিকে পুলিশ পৌঁছে। ওই ঘটনায় আমার প্রায় ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
এ ব্যাপারে আলিফকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ জানান, তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
সিংড়া থানার ওসি নূর এ আলম সিদ্দিকী জানান, গত শুক্রবার থেকে তিনি ছুটিতে ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরের পর কর্মস্থলে ফিরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ছাড়া বিকালে পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, থানার দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন খবর পাওয়ামাত্র ঘটনাস্থলে রওনা দেয় পুলিশ।
এসএন