ঘুমন্ত শিশুকে পুকুরে ফেলে হত্যা, বাবা গ্রেপ্তার
বগুড়ার শেরপুরের জাকির-রাবেয়ার সংসারে প্রথমে জন্ম নেয় এক মেয়ে। এরপর একটি ছেলের প্রত্যাশা ছিল বাবা জাকিরের। কিন্তু আবারও এই দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যা সন্তান। এ নিয়েই বাধে বিবাদ। প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকত।
সেই কলহের জের ধরে ১৪ মাস বয়সী ঘুমন্ত মেয়েকে পুকুরে ফেলে হত্যা করে বাবা জাকির হোসেন। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উঁচুলবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে ওই পুকুর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। জাকির উঁচুলবাড়িয়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে। শিশুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৭ বছর আগে জাকিরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের নামা সিংড়াপাড়া গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এক বছরের মাথায় একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। ৬ বছর বয়সী মোছা. জান্নাতি খাতুনের পর একটি ছেলে সন্তানের প্রত্যাশা ছিল বাবা জাকিরের। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন তিনি। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। এ কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। এ নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে রাতের কোনো একসময় ঘুমন্ত শিশুকে পুকুরে ফেলে দেন বাবা জাকির হোসেন।
নিহত শিশুর মা রাবেয়া খাতুন বলেন, মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে দেখি আমার মেয়ে হুমায়রা খাটের উপর নেই। পরে পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে বিষয়টি জানাই। সেই সঙ্গে আমার বোন-দুলাভাই খবর দেই। স্থানীয় প্রতিবেশীদেরও জানানো হয়। এরপর সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সন্তানকে না পেয়ে একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। একপর্যায়ে তারা স্বামীকে চাপ দিলে মেয়েকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
জাকিরের ভায়রা ভাই মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জাকিরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভোররাতে ওই পুকুরে নেমে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন সবাই। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে শিশুটিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর জাকিরকে আটক করে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, বিষয়টি জানার পর জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শজিমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসজি