অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর নরসিংদীর দগরিয়া বিল
হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত নরসিংদীর দগরিয়া বিল। আর এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পাখি প্রেমিরা। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি পাখি শিকার করছে অবাধে। তাই পাখিদের জন্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলার দাবি সচেতন মহলের।
মনের আনন্দে উড়ছে হাজার হাজার অতিথি পাখি। কখনো আকাশে কিচির মিচির শব্দ, আবার কখনো বা পানিতে লুকোচুরি। এ যেন পাখিদেরই রাজ্য। নিজ আনন্দে তারা গান গেয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে এক বিল থেকে অন্য বিলে। এমন আচরণে মনে হচ্ছে যেনো কোনো উৎসবে মেতেছে তারা।
হিমালয়ের উত্তরের সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপাল প্রভৃতি শীত প্রধান দেশ থেকে প্রচন্ড তুষারপাতের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পেরে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশে শীতের শুরুতেই আসতে শুরু করে এসব অতিথি পাখি।
অতিথি পাখিদের অধিকাংশই হাঁসজাতীয়। পাতি, সরালি, পান্তামুখী, পাতারি, পচার্ড, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, গার্গেনি, কোম্বডাক, পাতারী হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা, ফ্লাইফেচার ও কামপাখি জাতীয় পাখিই বেশী। হাজার হাজার পাখি দীর্ঘ হাজার পথ পাড়ি দিয়ে এদেশে আসে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, গত কয়েক বছর ধরে শীতের শুরুতে দলবেঁধে নরসিংদীর দগরিয়া বিলে আসছে এসব অতিথি পাখি। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার পাখিদের উপস্থিতি কিছুটা বেশী। আর পাখিদের এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পাখিপ্রেমীরা। এই সুযোগে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি পাখিগুলোকে নির্বিচারে শিকার করে বাজারে বিক্রি করছেন। শিকারীদের হাত থেকে পাখিদের রক্ষায় দগরিয়ার এ বিলকে অভয়আশ্রম হিসেবে গড়ে তোলার দাবী এলাকাবাসীর।
স্থানীয় আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজে থেকেই পাখির কিচির মিচর শব্দ শোনা যায়। পাখির ডাকগুলো খুবই ভালো লাগে। তাই কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই পাখির দৃশ্য দেশে আনন্দ উপভোগ করে। এই পাখি শিকার বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের নজর দেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
পাখি প্রকৃতির বড় একটি অনুসঙ্গ, এটি ভালো লাগার একটি অংশ। শীতের এই সময়ে সূদুর সাইবেরিয়া থেকে অনেক অতিথি পাখি আসে। প্রকৃতির সৌন্দর্য অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই তাদের শিকার না করে অভয়াশ্রম গড়ে তোলা উচিত বলে মনে করেন এই কলেজের বাংলা বিভিাগের সহকারী অধ্যপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
নরসিংদী পরিবেশ আন্দোলন (আপন) নামে সংগঠনের সভাপতি মাইনুল রহমান মীরু অতিথিপাখিগুলোকে তির্থযাত্রী হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, যারা আমাদের আনন্দ দেয় ও পরিবেশকে সমন্বিত রুপ দেয় তাদের এভাবে শিকার করা দু:খজনক। তাই শিকার রোধে স্থানীয় প্রশাসনের এবিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন।
নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম মোস্তাফা মিয়া জানান, শীতের শুরুতেই ভিনদেশ থেকে প্রচুর পাখি আসে এবং আমাদের বিল ও হাওড়ে অবস্থান নেয়। কিন্তু মানুষ নামের কিছু অসাধু ব্যক্তি সেই পাখিগুলোকে শিকার করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এবিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান এই শিক্ষাবিদ।
স্থানীয় প্রশাসন ও জনগনের সহায়তায় অতিথি পাখি শিকার রোধ করে তাদের জন্য অভয়াশ্রম গড়ে তুলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখবে এমন প্রত্যশা সচেতন মহলের।
কেএফ/