ঠাকুরগাঁওয়ে চেক প্রতারণার মামলায় নিঃস্ব দরিদ্ররা
সুবিধামতো জায়গা ভাড়া নিয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে আকৃষ্ট করতে লোভনীয় অফার ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ব্যানার। এরপর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ দেওয়ার নামে ব্ল্যাঙ্ক চেক হাতিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয় ১০-৫০ হাজার টাকা। টাকা দেওয়ার চার মাসের মাথায় উধাও হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। পরে ঋণ নেওয়া ব্যক্তিদের নামে একে একে আসতে থাকে চেক প্রতারণার মামলা।
করোনার সময় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের ভগতগাজী এলাকায় অগ্রনী-ই কমার্স লিমিডেট নামে একটি অফিসের জন্য বাড়ি ভাড়া নেয় ওমর আলী নামে এক ব্যক্তি। এলাকার মানুষকে ঋণ প্রদানে চটকদার প্রচারণা চালান। সাপ্তাহিক কিস্তিতে এক লাখ টাকা জমা করলে ছয় বছরের মাথায় দেওয়া হবে দুই লাখ টাকা। এ ছাড়া বসতবাড়ী, আবাদি জমি, দোকান ঘর, টিভি, ফ্রিজ, যানবাহনসহ বিনিয়োগ করা হবে অনেক কিছুই। এর পাশাপিাশি দেওয়া হবে ঋণ। এমন লোভনীয় প্রচারণায় মুগ্ধ হয় স্থানীয়রা। টাকা জমানোর পাশাপাশি অফিস প্রধান ওমর আলীর নির্দেশে ব্লাঙ্ক চেক জমা দিয়ে ঋণের জালে পাঁ দেন এলাকার দরিদ্ররা।
জনপ্রতি ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের চার মাসের মাথায় সটকে পড়েন অফিস প্রধানসহ অন্যান্যরা। এরপর আদালত থেকে একেক জনের নামে এক থেকে ছয় লাখ টাকার চেক প্রতারণা মামলার কাগজ আসলে জানতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছে। প্রত্যেক ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে হাওলাদ দেখিয়ে ওমর আলীর করা মামলায় এখন নিঃশ্ব হয়ে আদালত চত্বরে ঘুরছেন তারা। এদিকে আদালতে হাজিরা দিতে এসে ওমর আলীকে পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে বিচার দাবি করেন সবাই।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কেউ ৫ হাজার, কেউ ১০ হাজার, কেউ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু ঋণ নেয়ার পর কয়েকটি কিস্তিও দেওয়া হয়। পরে হঠাৎ অফিসের লোকজন উধাও হয়ে যায়। কিস্তি দেওয়ার জন্য ওমর আলী ও তার লোকজনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলেও তারা কিস্তি নিতে আসেননি। পরে শুনি এর ওর বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার মামলা হয়েছে। আমরা গরিব মানুষ ঋণ নিছি ৫-১০ হাজার টাকা। কিন্তু ওমর আলী বাদী হয়ে আমাদের ১১ জনের নামে মামলা করেছে। মামলায় প্রতিজনকে ১ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত হাওলাদ দেখানো হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। সেই সাথে তার বিচার দাবি করছি।
জানা গেছে, অভিযুক্ত ওমর আলী বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের নিময়ামতপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।
এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত মামলা চলমান থাকবে। কিছু লাভের আশায় তাদের টাকা হাওলাদ দেওয়া হয়েছিল।
অপরদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু হাসান জানান, ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে নিরীহ মানুষদের ব্যাংকে পাঠিয়ে একাউন্ট খুলিয়ে ঋণ দেওয়ার নামে চেক হাতিয়ে নেয় ওমর আলী। পরে ব্যক্তি বাদী হয়ে সবার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার মামলা করেন।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, এক ব্যক্তি একাধিক মামলা করেছেন। কেন করেছেন। তার আয়ের উৎস কি? সংশ্লিস্ট দপ্তরকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়ে বিষয়টি বিজ্ঞ জেলা জজ সাহেবের নজরে আনার কথা জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হলে তা বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ভুক্তোভোগীরা তার বিরুদ্ধে মামলা করলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অফিসটি স্থাপনের পর মাত্র ৪ মাস পরিচালনা করে ভগতগাজীসহ আশপাশের অর্ধশত মানুষের কাছে সঞ্চয় সংগ্রহের পাশাপাশি ঋণ দিয়ে ব্লাঙ্ক চেক হাতিয়ে ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতারণার মামলা করেন ওমর আলী।
এসআইএইচ