অদিতার উপর লোলুপ দৃষ্টি ছিল গৃহ শিক্ষক রনির
একজন গৃহ শিক্ষকের আড়ালে স্কুলছাত্রী অদিতার উপর লোলুপ দৃষ্টি ছিল গৃহ শিক্ষক রনির। সময়-সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সে। অবশেষে বৃহস্পতিবার সেই সুযোগ আসে। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ১৬৪ ধারায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এমদাদের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য উঠে আসে।
অভিযুক্ত আবদুর রহিম রনি (৩০) নোয়াখালী পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষীনারায়ণপুর মহল্লার লাতু কাউন্সিলরের বাড়ির খলিল মিয়ার ছেলে।
এ ব্যাপারে একই দিন রাত ৯টার দিকে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন আসে নোয়াখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনারায়ণপুর মহল্লায় নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কে বা কাহারা নিজ শয়ন কক্ষে গলায় ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। এ ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাই ঘটনাস্থলে। তখন সেখানে লোকে লোকারন্য। পিতৃহারা অদিতার নিথর রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে নিজ শয়ন কক্ষে। দুই রুমের সব আসবাবপত্র এলোমেলো। যেন একটু আগে কোনো ডাকাত চক্র ডাকাতি করে গেছে এ বাসায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। উপস্থিত লোকজনকে বুঝাতে চাইলেন কিশোর গ্যাংয়ের কাজ। পুলিশ সুপার সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন। অদিতার মায়ের সঙ্গে কথা বললেন। খুব ঠাণ্ডা মাথায় ঘটনা বিশ্লেষণ করলেন। আমাদেরকে দিলেন পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা।
তিনি আরো বলেন, সম্পূর্ণ ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য শুরু হলো তদন্ত। মানুষের মুখে মুখে কিশোর গ্যাংয়ের কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপার। অদিতার মায়ের বক্তব্যও তাই। চাপের মাঝে প্রতিটি বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। জানা গেল রনি নামে অদিতার এক গৃহ শিক্ষক ছিল। অদিতা তার কাছে পড়তে চাইত না। এক পর্যায়ে বদল করা হয় তাকে। অদিতা নতুন গৃহ শিক্ষকের নিকট পড়তে শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হানা দেওয়া হয় গৃহ শিক্ষক রনির বাসায়। রনিকে জিজ্ঞাসাবাদকালে রনির পরনের জামায় ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাগ দেখা যায়। গলায় খামছির দাগ। ঘাড় এবং মাথায়ও একই রকম দাগ। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ রনি এড়িয়ে যাচ্ছিল। সন্দেহ বাড়তে থাকে। রনির প্রতিটি উত্তর যাচাই করা হচ্ছিল। কিন্তু বার বার প্রমাণ হচ্ছিল সে মিথ্যা বলছে। কিছু লুকাচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, আদালতে উপস্থাপন করে রনিকে ৩ দিনের রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডে সে সব স্বীকার করে। জানা যায় যে একজন গৃহ শিক্ষকের আড়ালে অদিতার উপর ছিল তার লোলুপ দৃষ্টি। সময় সুযোগের অপেক্ষায় ছিল রনি। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার সেই সুযোগ আসে। অদিতাকে ঘরে একা পেয়ে তার বিকৃত যৌন লালসা চরিতার্থ করার চেষ্টা করে। যৌন লালসা চরিতার্থ করতে ব্যর্থ হয়ে এবং বিষয়টি বাহিরে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সে নির্মম ভাবে হত্যা করে অদিতাকে। পরে রনি নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত রনির ৩ দিনের মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত,গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকালের মধ্যে নোয়াখালীর মাইজদীর লক্ষীনারায়ণপুরে নিজ বাসায় অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্রী তাসমিয়া হোসেন অদিতাকে (১৪) ধর্ষণের চেষ্টা করে গৃহ শিক্ষক আবদুর রহিম রনি। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে নির্মম ভাবে হত্যা করেন তিনি । পরে এ ঘটনায় পৃথক অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি সাবেক গৃহ শিক্ষক আবদুর রহিম রনি (২০), ইসরাফিল (১৪) ও তার ভাই সাঈদ (২০) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশের একাধিক দল। এদিকে স্কুলছাত্রী অদিতা হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠে নোয়াখালীর শিক্ষাঙ্গন ও রাজপথ।
এসআইএইচ