যমুনায় বৈঠার তালে তালে উৎসবমুখর নৌকা বাইচ
আবহমান গ্রাম-বাংলার প্রাচীন লোক ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ পরিচিত নাম নৌকা বাইচ। হাজার বছর থেকে গ্রামাঞ্চলের জনপদের জীবনপ্রবাহ ও বিরামহীন এই জীবনযাত্রায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। সেই সঙ্গে কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের উৎসবমুখর প্রাচীন খেলাধুলা। তার সঙ্গে এ দেশের লোককৃষ্টির একটি অঙ্গ নৌকা বাইচ যা হারিয়ে যেতে বসেছে। জমছে না অতীতের মতো আজকাল আর নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।
গ্রামাঞ্চলে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন ঐতিহ্য নৌকা বাইচকে বাঁচিয়ে রাখতে বিগত কয়েক বছর ধরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর তীরে ঐতিহ্যবাহী গোবিন্দাসী পুরাতন ফেরিঘাট ও বৃহত্তর গরুর হাটের উত্তর-পশ্চিম পার্শ্বে কুকাদইর এলাকায় দুই দিনব্যাপী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। নৌকা বাইচের আয়োজন করেন টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনির।
এরই ধারাহিকতায় এমপি ছোট মনিরের উদ্যোগে শুক্র ও শনিবার (২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর) দুই দিনের নৌকা বাইচ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথম দিন নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন এমপি ছোট মনির। এরপর শুরু হয় যমুনার তীরে থৈ থৈ পানির ঢেউয়ে ডাক-ঢোল আর বৈঠার তালে তালে গ্রাম বাংলার গান আর মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছন্দে ছন্দে মন মাতানো নৌকা বাইচ।
নৌকা বাইচে সিরাজগঞ্জ-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না, টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনি, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বাবু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আলিফ নূর মিনি, ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতা, ছোট মনিরের স্ত্রী ঐশী খান, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিযোগিতাড় চুড়ান্ত বিজয়ীদের প্রথম পুরস্কার মোটরসাইকেল ও দ্বিতীয় পুরস্কার ফ্রিজ দেওয়া হয়। তৃতীয় পুরস্কার ছাড়াও অংশগ্রহণকারী সব নৌকাকে সান্ত্বনা পুরস্কার দেয় আয়োজক কমিটি। নৌকা বাইচটি গোবিন্দাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান গাজী ইকরাম উদ্দিন তারা মৃধার সভাপতিত্বে এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন চকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়।
যমুনা নদীতে দুই দিনের এ নৌকা বাইচে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জের প্রায় অর্ধশতাধিক নৌকা অংশ নেয়। নৌকা বাইচের একদিন আগে সকাল থেকেই টাঙ্গাইল ও ভূঞাপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বাইচের নৌকা অনুষ্ঠান স্থানে এসে উপস্থিত হয়। নৌকা বাইচের উদ্বোধনের দিন শুক্রবার সকাল থেকে আসতে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ।
নৌকা বাইচের প্রথম দিন দুপুর থেকে গোবিন্দাসী ঘাটের আশপাশে লাখো মানুষ সমাবেত হয়। দর্শনার্থীরা উচ্ছ্বাস ও আনন্দে মেতে উঠেন নৌকা বাইচ দেখতে। কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় নদীর তীরবর্তী এলাকায়। এ ছাড়া নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে নদীর কুকাদাইর কালো সড়কে নানা রকম দোকানপাট গড়ে উঠে। নৌকা দেখতে আসা লোকজন প্রতিবারই এমন নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করার দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা।
নৌকা বাইচের আয়োজক টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনির বলেন, গ্রাম-বাংলার প্রাচীন নৌকা বাইচ দিন দিন হারাতে বসেছে। নৌকা বাইচ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিবছরের মতো এবারও যমুনার তীরে গোবিন্দাসী নৌকা ঘাটে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছি। বিভিন্ন এলাকার বাইচে অংশগ্রহণসহ নানা শ্রেণির লোকজন উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিযোগিতা উপভোগ করেছে। প্রতিবছরই যেন নৌকা বাইচের আয়োজন করতে পারি সেজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
এসজি