বৃদ্ধ লতিফ না চালালে রিকশা খাবার বন্ধ পরিবারের
বৃদ্ধ আবদুল লতিফ সংসারের ঘানি টানতে ৪০ বছর যাবত রিকশা চালাচ্ছেন। এখন তার বয়স প্রায় ৮০ বছর। বয়সের ভারে এখন ঠিকমতো রিকশাও চালাতে পারছেন না। কিন্তু রিকশা না চালালে পরিবারের তিন বেলা খাবার জুটবে না। স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে সহ সবাই না খেয়ে থাকতে হবে। তিনিই পরিবারে একমাত্র আয়ের যোগানদাতা।
আবদুল লতিফ মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বালিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। তার পরিবারে আট সদস্য এর মধ্য মেয়ে সাত জন ও ছেলে একজন। এর মধ্যে ছয় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক মেয়ে প্রতিবন্ধী এবং ছেলে আজিজুল হাকিম সবার ছোট বয়স (১৫)।
সাত মেয়ের মধ্যে ছয় জনকে রিকশা চালানো আয়ের টাকায় বিয়ে দিয়েছি। এক মেয়ে প্রতিবন্ধী। তিনি মাদারীপুর জেলা শহরে অলিতে গলিতে সারাদিন রিকশা চালান। বয়সের ভারে বেশী দুরে চোখে দেখেন না। তার চোখে সমস্যা চোখ দিয়ে পানি পড়ে। খুব বেশি দূরের যাত্রী নিতে যেতে পারেন না। আবার ধীরগতির কারনে তেমন যাত্রীও তার রিক্সায় উঠতে চাননা। ফলে তেমন ভাড়া মারতে পারেন না।
রিক্সা চালক আঃ লতিফ বেপারী ঢাকা প্রকাশকে বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত রিকশা চালাচ্ছি। যা আয় করি তাতে আর সংসার চলেনা। আগে শক্তি ছিল, এখন শরীরে শক্তি পাইনা,এখন আর শরীর চলে না। সারা দিন রিক্সা চালালে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে কিভাবে চলব। আমার নিজের অনেক টাকার ঔষধ খেতে হয়। ওষুধ কিনব নাকি সংসার চালাব? তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে নামতে হয় রিকশা চালাতে।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় এক দিন রিকশা চালালে পরের দিন অসুস্থ হয়ে পড়ি। সারা শরীর এবং হাড়ে প্রচন্ড ব্যথা করে। কি করবো রিকশা না চালিয়ে উপায় নেই। চাল না কিনতে না পারলে স্ত্রী সন্তান না খেয়ে থাকবে। দিন শেষে যখন সন্ধ্যা নামে চোখে ভালভাবে দেখতে পাইনা। চশমাটা অকেদিন আগের ঠিকমতো কাজ করে না। এই বয়সে আমি একটু বিশ্রাম চাই। এখন আমার শেষ সময় আমার ইচ্ছা নামাজ-রোজা করে বাকী জীবন পার করা। তাই প্রধানমন্ত্রী ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য সহযোগীতা কামনা করছি।
আঃ লতিফ বেপারী কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি বৃদ্ধ তাই আমার রিকশায় অনেকেই উঠতে চায় না। আবার অনেক যাত্রী তাড়াহুড়ো করে জোরে চালাতে বলে পারি না। অনেক সময় যাত্রীরা ধমক দেন রাগ করেন, এর ফলে মাঝে মাঝে যাত্রীরা রিকশা থেকে নেমেও যান। তখন আমার অনেক কষ্ট লাগে। আমি তো সব যাত্রীকে তাড়াতাড়ি নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছে দিতেই চাই, কিন্তু বয়সের ভাড়ে পারি না।
পাশের অপর এক রিক্সা চালক রাকিব হাসান বলেন, আমি যুবক তাই ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারি না। কারন রাস্তায় কি যে গরম আর আঃ লতিফ বেপারী সেতো বৃদ্ধ মানুষ ৮০ বছর বয়সে কীভাবে রিকশা চালাবে?আমি দেখিছি সে রিকশা চালাতে গেলে তার হাত-পা কাঁপে। এটা দেখলে কেউ তার রিক্সায় উঠতে চায় না। এক দিন চালাইলে তিন দিন বাড়ীতে অসুস্থ হয়ে থাকে। সরকার এবং বিত্তবানরা যদি তার পাশে এগিয়ে আসতো তাহলে এই বয়সে এত কস্ট করতে হতোনা।
আরেক রিকশাচালক আহমেদ আলী বলেন, সরকার তো অনেক লোককে সাহায্য সহ অনেক কিছু দেয়। এই বৃদ্ধকে যদি একটা ব্যাবস্থা করে দিত তাহলে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে পারতেন। এই বয়সে তার পক্ষে রিকশা চালানো খুব কঠিন। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, সরকার যেন তাকে একটা স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। এ বিষয় বালিগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেস্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন ইয়াছমীন ঢাকা প্রকাশকে বলেন, এই বৃদ্ধের বিষয়,আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়ে থাকেন,তাহলে আমরা তাকে আর্থিক সাহায্য দেয়ার চেস্টা করবো। অবশ্যই সরকারের পক্ষ থেকে একটি স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
এএজেড