বগুড়ায় পাটের বাম্পার ফলন, হাসি নেই কৃষকের মুখে
বগুড়ার শেরপুরে হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে সোনালী আঁশ পাট। পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে, বিক্রিও হচ্ছে ভালো দামে। তবু কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানোর কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন না এই উপজেলার কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় দুই হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়। শুরু থেকেই আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকায় পাটের ফলনও হয়েছে ভালো। তবে সমস্যা হয় পাট কাটার পর জাগ দেওয়ার সময়। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দূর-দূরান্তে পাট নিয়ে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়ানো হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে কথা হয় একাধিক পাট চাষির সঙ্গে। উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শুবলী গ্রামের কৃষক শাহার আলী জানান, তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেন। কিন্তু পাট কাটা ও জাগ দেওয়ায় শ্রমিকদের বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। প্রতি বিঘা জমির পাট কাটতে ছয়জন শ্রমিক প্রয়োজন। এজন্য ৬০০ টাকা হারে মজুরি হিসেবে দিতে হয় তিন হাজার ৬০০ টাকা। আর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। তাই জমি থেকে অনেক দূরে নদী-নালা, খাল-বিল ও ডোবায় নিয়ে গিয়ে পাট জাগ দিতে হয়। এজন্য প্রতি বিঘায় বাড়তি ব্যয় হয় চার হাজার টাকা। পাটের আঁশ ছাড়াতেও একই পরিমাণ টাকা লাগে। অর্থাৎ শুধু পাট কাটা থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়ানো পর্যন্ত প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৮০০ টাকা। এ ছাড়া জমি তৈরি, সার-বীজ, নিড়ানিসহ পাট শুকানো বাবদ খরচ হয়েছে আরো ছয় হাজার টাকা। সেই হিসেবে পাট চাষে প্রতি বিঘায় খচর প্রায় ১৭ হাজার টাকা।
কৃষক শাহার আলীর দাবি, ওই জমি থেকে ছয় মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সেই পাট বিক্রি করে পেয়েছেন আঠারো হাজার টাকা। খরচ বাদে মাত্র এক হাজার টাকা অবশিষ্ট থাকে। কিন্তু জমির ভাড়া ধরলে কোনো লাভই থাকবে না। লাভ শুধু পাটখড়ি।
তিনি বলেন, লাভের আশায় নয়, গৃহস্থালি কাজে পাট প্রয়োজন। তাই পাটের চাষ ছাড়তে পারছি না।
সোলায়মান আলী নামের আরেক কৃষক বলেন, এবার পাটের ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘায় ছয় থেকে সাত মণ হারে পাট হয়েছে। পানি সংকটের কারণে জমি থেকে পাট কেটে অন্যত্রে নিয়ে গিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। শ্রমিক মজুরিও আগের বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি। তাই উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। ফলে ভালো ফলন ও দামে পাট বিক্রি করেও খরচ উঠছে না বলে জানান তিনি।
স্থানীয় হাটবাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাট বেচা-কেনা বেশ জমে উঠেছে। পাটের আমদানিও বাড়তে শুরু করেছে। ভ্যানে করে নতুন পাট নিয়ে আসছেন কৃষকরা। বিক্রেতারা দর কষাকষি করে পাট বিক্রি করছেন। ফলে ভালো দামও পাচ্ছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাটে প্রতি মণ ভালো মানের পাট বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। এরপরও কৃষক লাভবান হতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, এই মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেইসঙ্গে কৃষক পাটের দামও ভালো পাচ্ছেন। উৎপাদন খরচ বাড়লেও হাট-বাজারে পাটের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান হবেন।
এসআইএইচ