ওল কচু চাষে হাসি ফুটেছে সাইফুলের মুখে
ওল একটি কোন্দ (কচু) জাতীয় ফসল। ওলকে রান্না করে তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। আগে বাড়ির আনাচে কানাচে সামান্য পরিমাণে ওল কচু লাগানো হতো। কিছুদিন আগেও ওলের বিস্তর চাষ হতো না। তবে দিনকে দিন জয়পুরহাটের কৃষকরা ওল চাষ বাড়িয়েছেন। আগামী দিনে যেন ওল চাষ আরও বাড়ে সেটার চেষ্টাও করছেন কৃষকরা। ওল কচু চাষে খরচ হয় কম কিন্তু লাভ হয় প্রায় তিন গুণ। তাই কৃষকরা স্থানীয় উন্নত জাতের কন্দাল ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় এবার ওল কচু চাষ করছেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কোমর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে কন্দাল ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় আমি এবার বৈশাখ মাসের শেষার্ধে ২০ শতক জমিতে ওল কচু চাষ করেছি। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে সার ও ওষুধ প্রয়োগ, চারা রোপণ, জমির পরিচর্যা ও সেচ বাবদ এ পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, বীজ বপনের সাত থেকে আট মাসের মধ্যেই এ ফসল ঘরে উঠে। সেই হিসেবে অগ্রহায়ণ বা পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় এর ফসল তুলতে পারব। তখন পর্যন্ত খরচ হবে আরও অন্তত ৫ হাজার টাকা। বিশ শতক জমিতে ৪৫০টি ওল কচুর গাছ লাগিয়েছি। ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত ৫০টি গাছ মরে গেলেও বেঁচে থাকবে ৪০০টি। প্রতিটি গাছ থেকে ৬-৮ কেজি পর্যন্ত ওল পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সেই হিসেবে আমার ফলন হওয়ার কথা ২ হাজার ৪০০ কেজি।
তিনি আরও বলেন, খুচরা বাজারে ওল কচু ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও পাইকারিতে বিক্রি হয় অন্তত ৩০ টাকা কেজি দরে। সে হিসেবে পাইকারিতে বিক্রি করলেও এ ফসল বিক্রি করে অন্তত ৭০ হাজার টাকা পাব। তাতে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার লাভ থাকবে অন্তত ৫০ হাজার টাকা। আমার বিশ্বাস, আমি কাঙ্ক্ষিত এ লাভের মুখ দেখতে পেলে আগামীতে এলাকায় ওল কচুর চাষ আরও বাড়বে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় উন্নত জাতের কন্দাল ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলায় বেশ কিছু কৃষক এবার ওল কচু চাষ করেছেন। সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের ধলাহার গ্রামের কৃষক নুর মোহাম্মদ এবং সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের কিন্দুল গ্রামের কৃষক শ্রী সাগর বর্মন এবং বম্বু ইউনিয়নের কোমর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম তাদের মধ্যে অন্যতম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ওল কচু সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতারাও পছন্দ করেন এ সবজিটি। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকরা গাছ প্রতি ৭-১০ কেজি পর্যন্ত ওলের ফলন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাজারে ওল কচুর পাইকারি দাম পাবেন অন্তত ৩০ টাকা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কায়সার ইকবাল বলেন, ওল কচু চাষে খরচ হয় নামমাত্র। কিন্তু লাভ হয় দুই থেকে তিন গুণ। এই ওল কচু এমন একটি ফসল যাতে পোকা-মাকড়ের বালাই নেই। রোগ-বালাই কম। অনাবৃষ্টি বা খরার কবলে না পড়লে সেচের প্রয়োজন হয় না। এমনকি গরু, ছাগলেও এ গাছ খায় না। পরিত্যক্ত আধা ছায়া জায়গাতেও এটি হয়। অবশ্য রোদযুক্ত জায়গায় লাগানো গেলে, ফলন ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, বাজারদর কম থাকলে, ফসল না তুললেও ক্ষতি হয় না। বরং দেরিতে তুললে ফলন আরও বাড়ে। আলু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না তুললে, জমিতে পচে নষ্ট হয়। কিন্তু ওল কচুর মাটির নিচে থাকলে আকারে বড় হয় কিন্তু নষ্ট হয় না। মোটকথা, ওল কচু চাষে লোকসানের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তাই জয়পুরহাটের কৃষকদের ওল চাষে আগ্রহী করার জন্য কৃষি বিভাগ নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য সদর উপজেলার দর্শনীয় স্থানে বেশ কিছু প্রদর্শনী প্লটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক কথাই ওল কচু চাষে রিস্ক বা ধরা খাওয়ার কোনো উপায় নেই। যারা কৃষিকাজে নতুন আসছেন, তাদের জন্যও ওল চাষ নিরাপদ।
এসজি