শ্রীপুরে ভুল চিকিৎসায় ভ্রুণ হত্যার অভিযোগ
গাজীপুরের শ্রীপুরে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্রীপুর চৌরাস্তার জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর স্বামী ১২ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের চিকিৎসক শাকিলা শাহরিন ও তার স্বামী হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
শ্রীপুরের বাসিন্দা আরিফ হাসানের অভিযোগে জানা যায়, তার স্ত্রী আমেনা আকতার অন্তঃসত্ত্বা সন্দেহে গত ১৪ জুন ওই হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক জানান এখনও অন্তঃসত্ত্বা হয়নি। পরে আবার ৩ জুলাই গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে অন্তঃসত্ত্বা জানিয়ে ব্যবস্থা পত্র লিখে দেন। তার ১৫ দিন পর গেলে ভ্রুনটি ভালো অবস্থানে নেই জানিয়ে জরায়ুর ভেতরে থাকা ভ্রুনটি নষ্ট করে বের করার জন্য ব্যবস্থাপত্র দেন। সর্বশেষ ১ আগস্ট হাসপাতালে যাওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান ভেতরে কিছু নেই। ওষুধ খাবার পর সবকিছু পরিষ্কার হয়ে বের হয়ে গিয়েছে। এখন সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। এরপর থেকে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এক পর্যায়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্মরত চিকিৎসক নষ্ট হওয়া ভ্রুন জরায়ু থেকে উদ্ধার করেন।
ভুক্তভোগীর স্বামী আরিফ হাসান জানান, ভুল রিপোর্ট ও ভুল চিকিৎসার জন্য আমার স্ত্রী অনেক দিন ধরে অসুস্থ। তিনি তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন।
এদিকে ১৩ সেপ্টেম্বর রায়হান নামে আরেকজন ভুক্তভোগী জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান হত্যার অভিযোগ দায়ের করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।
রায়হান জানান, তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হবার পর থেকেই নিয়মিত ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে থাকেন। ৪ জুলাই চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৮ জুলাই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের কথা জানান। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী তারা ১৮ তারিখের অপেক্ষায় থাকেন। এরই মধ্যে ১৫ জুলাই তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন গর্ভের সন্তান নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়েছে। রায়হান হাসপাতালের পরিচালককে ফোন দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ চান। কিন্তু পরিচালক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা না বলতে দিয়ে নিজেই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে গ্যাস দেওয়ার কথা বলেন।
এরপর রায়হান তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসককে না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যান। পর দিন হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান মারা গেছে। সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান কীভাবে মারা গেল জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাদের সহযোগিতা চাইলেও তারা টালবাহানা শুরু করেন। কোনো চিকিৎসা সহযোগিতাও করেনি। বাধ্য হয়ে ওই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে মাওনা আলহেরা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। এরপর তার স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করেন।
আলহেরা হাসপাতালের চিকিৎসক তাদের জানিয়েছিলেন, গত ৪ জুলাই সন্তান প্রসবের সঠিক সময় ছিল। হয়তো দেরি হওয়ায় বাচ্চা মারা গেছে। রায়হান অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন চিকিৎসক কখনো সনোলজিস্ট কখনো প্যাথলজিস্ট হিসেবে বিভিন্ন রিপোর্টে স্বাক্ষর করেন। হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল চিকিৎসক না হয়েও হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসক সেজে ভুল চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে বিভ্রান্ত করেন। এ ছাড়াও হাসপাতালের নার্স ও স্টাফরা রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত চিকিৎসক শাকিলা শাহরিন ও তার স্বামী হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএন