আখ চুরির অভিযোগে গ্রাম আদালতে পাঁচ শিশুর বিচার
নওগাঁর মান্দায় আখ চুরির অভিযোগে গ্রাম আদালতের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে পাঁচ শিশুর বিচার করা হয়েছে। বিচারে ওই পাঁচ শিশুকে জনসম্মুখে চড়-থাপ্পড় ও কান ধরে উঠবস করিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া তাদেরকে ১ হাজার ২০০ টাকা আর্থিক জরিমানাও করা হয়। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২ টার দিকে উপজেলার ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) গ্রাম আদালত এ বিচার কাজ করেন চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।
এ সময় ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডর সদস্য হারুন অর রশীদসহ পরিষদের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ভুক্তভোগী শিশুদের নাম, ভালাইন ইউনিয়নের বলশিং গ্রামের রুবেল হোসেন (১৩), তাজবিদ হোসেন (১৪), মিনহাজ (১৪), শান্তইসলাম (১৩) ও মহিদুল ইসলাম(১৫)। এদের মধ্য রুবেল, তাজবিদ, মিনহাজ ও শান্ত বলশিং চকবাবন দাখিল মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার কিছু পরে গ্রামের আনিছুর রহমানের ক্ষেতের পাশ থেকে ওই পাঁচ শিশুকে আখ চুরির অভিযোগে ক্ষেতের মালিক ও তাঁর লোকজন। সংবাদ পেয়ে ভালাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা রাতে সেখান উপস্থিত হন। এ সময় তিনি শিশুদের অভিভাবকদের আজ শনিবার গ্রাম আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়ে চলে যান।
বলশিং গ্রামের বাসিন্দা শাহিন আলম বলেন, আজ বেলা ১২ টার দিক গ্রাম আদালতের আসামির কাঠগড়ায় পাঁচ শিশুকে দাঁড় করিয়ে বিচার সম্পন্ন করেন চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। বিচার চুরির অভিযোগ এনে তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ১২০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন চেয়ারম্যান। এ সময় বিচারের রায় মোতাবেক এজলাস কক্ষে উপস্থিত লোকজনের সামনে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের চড়-থাপ্পড় মারেন।
এ প্রসঙ্গ জানতে চাইলে ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদর চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, 'এলাকার স্বার্থ ও সংশোধন করতে শিশুদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করা হয়েছে। তাদের ভয়ভীতি দেখাতে জরিমানাও করা হয়। এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই'।
শিশুদের জনসম্মুখে বিচার করে চড়-থাপ্পড় মারা ও গ্রাম আদালতের কাঠগড়ায় তোলার বিষয়ে নওগাঁ জজকোর্টের আইনজীবী মহসীন রেজা বলেন, 'শিশু আইন অনুযায়ী গ্রাম আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শিশুদের বিচার করার এখতিয়ার রাখেন না চেয়ারম্যানরা। যদি এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে সেটি বাড়াবাড়ি হয়েছে'।
তিনি আরও বলেন, 'বিষয়টি খুবই ছোট। শিশুদরে জনসম্মুখে না নিয়ে চেয়ারম্যান স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরে ঘরে নিষ্পত্তি করে দিতে পারতেন। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো মোটেও উচিত হয়নি। এটি শিশু আইনের চরম লঘন'।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, আখ চুরির সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু অভিযুক্তরা শিশু হওয়ায় স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করে দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, 'বিষয়টি এইমাত্র জানলাম। গ্রাম আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শিশুদের বিচার করে থাকলে চেয়ারম্যান একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করেছেন'।
এএজেড