৪৮ বছর ধরে মাটির ঘরেই পাঠদান!
টাঙ্গাইলের সখীপুরে দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে উপজেলার মওলানা পাড়া ছালাফিয়া সিনিয়র মাদরাসায় এখনো উন্নয়ন ও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। ফলে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীকে মাটির ঘরে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করছেন শিক্ষকরা। এতে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা না থাকায় আধুনিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী নবগঠিত হতেয়া রাজাবাড়ী ইউনিয়নের মওলানাপাড়া এলাকার মওলানা পাড়া ছালাফিয়া সিনিয়র মাদরাসায় ৩৫ গজের লম্বা জরাজীর্ণ একটি মাটির ঘর। ঝুঁকি নিয়ে সে ঘরে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। ঝড়-বৃষ্টিতে যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে মাটির দেয়াল। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই পাঠদান করছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে মরহুম আবদুল হাই ছালাফি মাদরাসাটি স্থাপন করেন। এরপর শর্তপূরণ সাপেক্ষে মওলানাপাড়া ছালাফিয়া সিনিয়র মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পর ১৯৮৫ সালে এমপিওভুক্ত হয়। ওই বছরই এলাকার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়। এই মাদরাসার আশপাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোনো মাদরাসা বা স্কুল। মাদরাসায় একইসঙ্গে বিজ্ঞান, মানবিক, মোজাব্বিদ ও হিফজুল কোরআন অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ৪টি শাখায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এই মাদরাসায় ১৮ জন শিক্ষক ও দুইজন কর্মচারী রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী নেই, তবুও চারতলা ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী থাকার পরেও পাকা ভবন নেই। বসার জায়গা দিতে পারি না। উপজেলার অনেক স্কুল, কলেজে পাকা ভবন আছে, আরও হচ্ছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে নেই। ডিজিটাল যুগে এখন আর শিক্ষার্থীরা মাটির ঘরে পাঠদান নিতে চায় না। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে তিনি প্রতিষ্ঠানের ভবন বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করেন সরকারের কাছে।
শিক্ষকরা জানায়, এর আগে জেলা পরিষদ থেকে টিনশেড ভবন পেয়েছি তার একটিতে শিক্ষকদের বসার রুম, অন্যটি মেয়েদের কমন রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিয়োগ পাওয়া নতুন শিক্ষকরা মাদরাসার অবকাঠামোগত অবস্থা দেখে যোগদান করতে চায় না। একাডেমিক ভবনের সমস্যার কারণেই অনেক শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমরান জানান, শিশু শ্রেণি থেকে মাটির ঘরের এই মাদরাসায় তারা লেখাপড়া করছে। একটু বৃষ্টি হলেই চাল বেয়ে পানি পড়ে বই খাতা নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়াও ঘরে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হওয়ায় ভীষণ কষ্ট হয়।
তারা আরও বলে, ওই মাদরাসা ছাড়া বর্তমান সময়ে উপজেলায় কোনো স্কুল বা মাদরাসায় মাটির ঘর নেই। ভর্তি হওয়ার পর থেকে শিক্ষকদের মুখে শুধু শুনেই আসলাম আমাদের চারতলা ভবন হবে। কিন্তু কবে হবে সেটির অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না।
মাদরাসার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ মো. তালিবুর রহমান বলেন, ২০১৪-১৫ ও ২০২০ সালে পাকা ভবনের জন্য আবেদন করেছি। তবে এখনো ভবন বরাদ্দ পাইনি। বর্তমানে মাদরাসায় ৩৯০ শিক্ষার্থী থাকলেও আধুনিক অবকাঠামো না থাকায় নতুন ছেলে-মেয়ে ভর্তি হতে চায় না। এরপরও বাধ্য হয়েই দীর্ঘদিনের পুরোনো মাটির ঘরেই ক্লাস নিচ্ছি। ঘরের টিনের চালে মরচে ধরেছে, মাটির দেয়ালও ফেটে যাচ্ছে। মাটির শ্রেণি কক্ষ নিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কায় আছি। সব সময় শঙ্কায় থাকি। আমাদের একটি একাডেমিক পাকা ভবনের জরুরি প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনও কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
মাদরাসা গভর্নিং বডির সভাপতি মো. আতিকুর রহমান বলেন, ২০২০ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য এই মাদরাসার একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তিনি একটি ভবন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে এখনো পাইনি।
এ ব্যাপারে সখীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় একটি মাত্র মাদরাসাই মাটির ঘরে পরিচালিত হচ্ছে। ওই ঘরটিও প্রতিষ্ঠানের শুরুতেই নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে মাদরাসাটি উপজেলার দুর্গম ওই এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে ভালো ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক, ফলাফল সন্তোষজনক। শিক্ষার গুণগতমান আরও উন্নত করতে এই প্রতিষ্ঠানে একটি একাডেমিক পাকা ভবন প্রয়োজন। তিনি বলেন, সীমাবদ্ধতার কারণে মাদরাসায় পাকা ভবন বরাদ্দ হয়নি। আগামীতে ওই মাদরাসার জন্য পাকা ভবনের চাহিদা দেওয়া হবে।
এসএন