নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা: দর্শনায় ওসির বিরুদ্ধে মামলা
ডাকাতি মামলায় ধরে এনে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টায় আদালতে ওসির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থানায়।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার আলোচিত রাস্তায় গাছ ফেলে গণডাকাতির ঘটনার মামলার ২ মাস পার হলেও প্রকৃত ডাকাত সদস্যদের ধরতে পারেনি পুলিশ। এখনও উদ্ধার করতে পারেনি লুট হওয়া ৩৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর এই মামলায় ১৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। এর মধ্যে চারজন আসামিকে তিনি ৪৮ ঘণ্টা থানা হেফাজতে রেখে চরম শারীরিক নির্যাতন করেন। পরে ডাকাতির ঘটনার তাদের মিথ্যা স্বীকারক্তি নিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার চেষ্টা করায় আসামি পক্ষ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি এ এইচ এম লুৎফুল কবীর বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে পুলিশ কতৃক আসামি নির্যাতন মামলার শুনানি আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ মোঃ জিয়া হায়দার।
মামলা এজেহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০জুন ঝিনাইদহ শহরের মুরারি মোহন সাহার ছেলে ঠিকদার ব্যবসায়ী রনি সাহা তার ব্যসায়ীক র্পাটনার ইকরামুল হক ও তাদের প্রাইভেটকার ড্রাইভার বিশ্বজিৎ কুমার সাহাকে নিয়ে ব্যবসায়ীক কাজে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর থানাধীন শিয়ালমারি এলাকায় আসে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাজ শেষে ফেরার পথে দর্শনা থানাধীন গয়েশপুর-সড়াবাড়িয়া সড়কের শালিকচারা এলাকার ফাঁকা মাঠ এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় ১০/১৫ জনের একটি ডাকাত দল রাস্তার পাশের একটি বড় গাছ কেটে রাস্তার উপর ফেলে ধারালো অস্ত্র তাদের গলায় ধরে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে মোট ১৪ ভরি ওজনের ৫টি স্বণের আংটি, দুইটি গলার চেইন, ১টি ব্রেসলাট ও নগদ ৫১ হাজার টাকা নিয়ে যায়। সেই সময় সড়াবাড়িয়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে ঠিকাদার ব্যবসায়ী ওয়াহেদ এর কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা, আলমডাঙ্গার ব্যবসায়ী মৃত এলাহী বক্স মধুর ছেলে কুতুবের কাছ থেকে নগদ ১৩ লাখ ৩০হাজার টাকা ও স্থানীয় একাধিক পথচারির নিকট থেকে আরো ৫০ হাজার টাকাসহ মোট ৩৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা সোনর গহনা ও টাকা নিয়ে ডাকাতি করে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার পরদিন বাদী হয়ে ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড-১৮৬০ ধারায় দর্শনা থানায় ১০/১৫ জন অজ্ঞাত ডাকাত দলের নামে একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী রনি সাহা। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হয় দর্শনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি এ এইচ এম লুৎফুল কবীর। এরপর এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যায়ক্রমে সন্দেহভাজন ১৩ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় আটকে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় আসামি মো. নিশান আলী (২৫), মো. সুজাত আলী (২৫), রিয়াজ হোসেন (২৪) ও মো. নোইম হোসেন বাদী হয়ে ওসি লুৎফুল কবিরের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবি অ্যাডভোকেট মোঃ মশিউর রহমান পারভেজ বলেন, ‘এই মামলায় আমার বাদী পক্ষকে নির্যাতনের করেছে তার যথেষ্ট প্রমানাদি বিজ্ঞ আদালতে পেশ করেছি। আমরা আশা কারছি বিজ্ঞ আদালতে ন্যায়-বিচার পাব। এতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে বলে মনে করছি।’
এ ব্যাপারে দর্শনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর বলেন , ‘আলোচিত ডাকাতির মামলাটি ডিবিতে রেফার্ড করা হয়েছে। ৪ জন আসামি আমার বিরুদ্ধে আদালতে নির্যাতনের মামলা করলে চুয়াডাঙ্গা সিনিয়ার বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে মামলাটি না মঞ্জুর করেছে। চুয়াডাঙ্গা দায়রা জজ আদালতে মামলা গ্রহন করে নথিভুক্ত করে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে শুনানির দিন ধার্য করেছে।’
এসআইএইচ