দুর্গন্ধের মধ্যে মাছ-মাংস বিক্রি
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বালারহাট বাজারে ময়লা-আবর্জনাসহ পঁচা কাদাযুক্ত পানির দুর্গন্ধে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে মারাক্তকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষ। যেন দেখার কেউ নেই।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট বালারহাট বাজার। এই বালারহাট বাজারে দীর্ঘদিন ধরে কাদা আর ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ দুর্গন্ধে চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে মাছ ও মাংস হাট্টির অবস্থা খুবই করুণ। সেখানে পঁচা কাদাযুক্ত পানির দুর্গন্ধে বাতাসের মাধ্যমে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এতে রোগব্যধি দেখা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জানা গেছে, বালারহাট বাজার থেকে বছরে লাখ লাখ টাকা ইজারা বাবদ আয় হলেও কেউ কোনও খোঁজ-খবর রাখছে না। বাজারেই এমন দৈন্যদশা বিরাজ করলেও যেন দেখার কেউ নেই। নেই বালারহাট বাজারে ময়লা রাখা ডাসবিনের কোনও ব্যবস্থা। পুরাতন ড্রেনেজগুলো অকেজো হওয়ায় কাদা আর নোঙরা পানির পাশাপাশি প্লাষ্টিকের ছোট-বড় ব্যাগ দিয়ে ড্রেন ভর্তি হয়ে গেছে। এসব ময়লাযুক্ত জায়গায় বসবাস করছে মাছি আর জীবাণুযুক্ত পোকা-মাকড়। এসব মাছি ও পোকা-মাকড়ের উপদ্রবে বাজারে যাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের। এরপরেও বাধ্য হয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা ও জনসাধারণ দিনের পর দিন তাদের নিত্যদিনের কেনাকাটা করছেন। পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার প্রতি বছর এই হাট থেকে লাখ লাখ টাকা ইজারা বাবদ রাজস্ব আদায় করলেও মাছ হাট্টির পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেনগুলো সংস্কার না করার ফলে কাদা-ময়লা ও আবর্জনায় বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্গন্ধে বাজারে হাটা-চলা করা বড়ই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ডাসবিনের অভাবে হাট-বাজারের ময়লা আবর্জনা গুলো বাজার সংলগ্ন সড়কের পাশেই ফেলা হচ্ছে।
অন্যদিকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তাদের দোকানের সম্মুখ ভাগ উচুঁ করে নেওয়ায় গলিগুলো নিচু হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই ময়লাযুক্ত কাদাসহ ড্রেনের উপচে পরা পানি ও বৃষ্টির পানি জমে থাকায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে মাছ বাজার ও সবজি বাজার গুলোতে। এর পরেও ক্রেতা বিক্রেতাসহ জনসাধারণ ড্রেনের দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও কাদার উপর দিয়ে হাটা-চলা ও সওদা করছেন।
বালারহাট বাজারের মাছ বিক্রেতা তপন চন্দ্র বিশ্বাস ও মানু বিশ্বাস জানান, আমরা জীবন-জীবিকার তাগিতে বছরের পর বছর পঁচা দুর্গন্ধের মধ্যেই বসে মাছ বিক্রি করে আসছি। ইজারাদারতো শুধু তাদের ইজারা তোলেন। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বাজারের ড্রেন গুলো পরিস্কার না করায় কাদা জমে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। আমরা বাধ্য হয়ে পঁচা দুর্গন্ধ সহ্য করেই আছি। তারা বালারহাট বাজারের মাছ পট্টীর পানি নিস্কাশনের জন্য ড্রেনগুলো সংস্কার করার দাবি জানান।
একই বাজারের মাংস বিক্রেতা নুর মোহম্মদ ও মাসুদ রানা জানান, আমরা দীর্ঘদিন থেকে পঁচা দুর্গন্ধ সহ্য করেই পশু জবাই করে আসছি। হাট কমিটিকে বলার পরেও তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অস্বাস্থকর পরিবেশে পশু জবাইয়ের বিষয়টি স্বাস্থ্য সম্মত কি না প্রশ্ন করলে এই দুই মাংস বিক্রেতা জানান, জানি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে আমরা পচা দুর্গন্ধ সহ্য করে মাংস বিক্রি করছি।
বালারহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক রতন চন্দ্র রায় জানান, বাজারে মাছ ও মাংস হাট্টি গেলে নাগ বন্ধ করে যেতে হয়। অবস্থা এ্যাতোই খারাপ যে বলার ভাষা নেই। বিষয়টি সবার নজরে থাকলেও পরিস্কারের কোন উদ্যোগ নেই। তিনি দ্রæত মাংস ও মাছ হাট্টি পচা দূগন্ধের হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোড় দাবি জানান।
বালারহাট বাজার কমিটির সভাপতি ও নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, দুই একটি দোকানের কারণে মাছ হাট্টির ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজো হওয়ায় কাদা আর নোঙরা পানির পাশাপাশি প্লাষ্টিকের ছোট বড়-ব্যাগ দিয়ে ড্রেন ভর্তি হয়ে গেছে। এসব ময়লাযুক্ত জায়গায় বসবাস করছে মাছি আর জীবাণুযুক্ত পোকা মাকড়। এসব মাছি ও পোকা-মাকড়সহ পচা দুর্গন্ধে মাছ হাট্টি যাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের। তারপরেও সাধারণ মানুষ পঁচা দুর্গন্ধ সহ্য করে প্রয়োজন মিটাতে মাছ ও মাংস ক্রয় করছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উধ্বর্তন কর্তৃকপক্ষকে জানানো হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সামচুল আরেফিন জানান,বালারহাটে নিদিষ্ট পশু জবাই খানা নেই। বিষয়টি হাট-কমিটিকে জানানো হবে। কোনও মাংস বিক্রেতা যদি অস্বাস্থ্যাকর পরিবেশে মাংস জবাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।