শিক্ষার্থী নেই তবুও এমপিওভুক্ত হলো মাদ্রাসা
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার পারফলসী দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী না থাকলেও এমপিওভুক্ত হয়েছে মাদ্রাসাটি। খাতা কলমে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে নেই। জরাজীর্ণ রুমে পশু-পাখির বসবাস।
৬ জুলাই প্রকাশিত এমপিওভুক্তি তালিকায় নাম এসেছে এই মাদ্রাসার। কিন্তু এরপর থেকেই মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে শুরু হয় ব্যাপক দুর্নীতি। পত্রিকায় ব্যাকডেটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে শিক্ষা কর্মকর্তা ও ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর জাতিয়াতি করা হয়েছে। এমপিওভুক্তির এমন খবরে মাদ্রাসার শিক্ষকরা আনন্দিত হলেও বিস্মিত হয়েছে এলাকার সচেতন সমাজ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাঝে মাঝে এর অফিস খোলা হলেও আসে না কোনো শিক্ষার্থী। তারপরও কীভাবে এমপিওভুক্ত হয় এই মাদ্রাসা- প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায় মাদ্রাসাটি খোলা থাকলেও কোনো শিক্ষার্থী ছিল না। সুপার-শিক্ষকসহ মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিলেন পাঁচজন। পরে দুইজন শিক্ষক উপস্থিত হন। পরিত্যক্ত রুমগুলো জরাজীর্ণ। রুমের মধ্যে শুয়ে আছে ছাগল-কুকুর। নেই শিক্ষার পরিবেশ। অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠান এমপিও হওয়ার কথা শুনে কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। আবার যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদের নাম এমপিওভুক্তির জন্য পাঠানো হয়নি।
পারফলসী দাখিল মাদ্রাসার সুপার ইয়ারুল ইসলাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার নৃসিংহপুর মাদ্রাসার শিক্ষক নাজমুল ইসলাম ফিরোজকে সহকারী সুপার পদে ব্যাকডেটে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক রঘুনাথপুর গ্রামের সামছুল আলম গলাই ফাঁস দিয়ে ২০২০ সালের দিকে মারা যান। ওই পদে আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্রীনগর গ্রামের সাইফুল ইসলামকে ব্যাকডেটে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া আরও একজন কর্মচারী ব্যাকডেটে নিয়োগ দিয়েছেন চক্রটি। সুপার ইয়ারুল ইসলাম, শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মুকুল মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট চক্রটি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এমপিওভুক্তির জন্য ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নাম পাঠিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। এতে করে হরিণাকুন্ডুতে হইচই পড়ে গেছে। উপজেলার পারফলসী গ্রামের শিউলি খাতুন, বিপ্লব হোসেন, কাপশহাটিয়া গ্রামের বাবুল হোসেন, মান্দিয়া গ্রামের ওয়াসকরোনীসহ পাঁচজন শিক্ষক টাকা দিয়ে নিয়োগ নিলেও তাদের নাম এমপিওভুক্তির জন্য পাঠায়নি সুপার ইয়ারুল ইসলাম।
মাদ্রাসার পাশের বাড়ির এক ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে বলেন, এই মাদ্রাসায় মাত্র কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী আছে, হাফেজি মাদ্রাসাসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ধার করে এনে পারফলসী দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি দেখানো হয়েছে। তাদের দিয়েই ভর্তি, নিবন্ধন ও পরীক্ষার্থী হিসেবে দেখানে হচ্ছে।
শিক্ষার্থী নেই এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার সুপার ইয়ারুল ইসলাম আমতা আমতা করে এড়িয়ে যান। তবে অন্য একজন শিক্ষক বলেন, আমরা টিফিন দিয়েছি, সবাই বাড়িতে গিয়েছে। কখন টিফিন দিয়েছেন জানতে চাওয়া হলে এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ওই শিক্ষক। গোপনে রেজুলেশন খাতা কাটা-ছেঁড়া করে সহকারী সুপারসহ তিনজনের নিয়োগের বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
মাদ্রাসার সভাপতি মানোয়ার হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে দায়িত্ব নিয়েছি। নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানি না। সুপার ইয়ারুল ইসলাম নিয়োগের বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
হরিণাকুন্ডু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, মাদ্রাসায় নিয়োগে জালিয়াতিতে তার দপ্তরের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, অনিয়মের বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখব।
এসএন