কুমিল্লায় কিশোরকে হত্যা: ৫ মিনিটের ‘কিলিং মিশন’
১৫ থেকে ২০ জনের একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ ধাওয়া করছে শাহাদাতকে। তাদের দুইজনের হাতে অস্ত্র। প্রাণভয়ে ছুটছে শাহাদাত...। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে ঘিরে ধরে এলোপাতারি কোপাতে থাকে অস্ত্রধারীরা। একই সঙ্গে পর পর কিল-ঘুষি-লাথিও মারা হয়। রক্তাক্ত কিশোর শাহাদাত লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। পার্ক থেকে ডেকে এনে খুন সব মিলিয়ে ৫ মিনিটের ‘কিলিং মিশন’ শেষে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কিশোর গ্যাং গ্রুপটি। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় এভাবেই প্রকাশ্যে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় নগরজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। আলোচনা চলছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌড়াত্ম্য নিয়েও।
নিহত শাহাদাত কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলী এলাকার গাড়ী চালক শাহালম ভুইয়ার ছেলে। তিনি নগর উদ্যানে একটি রাইডের কর্মচারি ছিল বলে জানা গেছে। তবে রাইড কর্তৃপক্ষের দাবি, ২ মাস আগেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল শাহাদাত। গতকাল তিনি নিজের কাজেই পার্কে এসেছিল।
কুমিল্লা নগর উদ্যান সংলগ্ন আওয়ার লেডী অব ফাতেমা গার্লস হাই স্কুলের গেইটের বিপরীত পাশে কিশোর শাহাদাত হোসেন হত্যাকাণ্ডের পর ২ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের একটি সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরার ফুটেজে পুরো ঘটনাটি ধরা পড়ে।
ওই এলাকার একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ১৪ মিনিটের সময় পার্কেল পূর্ব দিকের গেইট থেকে আনুমানিক ২০ জনের একটি দল শাহাদাতকে ধাওয়া করে ঘটনাস্থলের দিকে নিয়ে যায়। পেছনে দৌঁড়ে আসে আরো অন্তত ৬/৭ জন। এর মধ্যে দুজন অস্ত্রধারী তাকে আঘাত করছে বলে দেখা যায়। ক্যামেরায় দেখা যাওয়া হামলাকারী সবাই কিশোর বয়সের।
ফুটেজে আরও দেখা যায়, আওয়ার লেডী অব ফাতেমা গার্লস স্কুলের গেইটের বিপরীত পাশে স্টেশন ক্লাব লাগোয়া ফুটপাত ধরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে শাহাদাত। এ সময় মাথায় টুপি ও টি-শার্ট পরা এক যুবক তাকে হাতে থাকা অস্ত্র সাদৃশ্য কিছু দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে। একই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা সাদা পাঞ্জাবি টুপি পরা এক ব্যক্তি হামলাকারীদের বাঁধা দিয়ে শাহাদাতকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ছুটতে থাকা হামলাকারী দল শাহাদাতকে উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে থাকে। সে সময়ের মধ্যেই ওই টি-শার্ট টুপি পরা হামলাকারী শাহাদাতের বাম পায়ের উপরের উরুর দিকে আঘাত করে। পরে আরো কয়েকজন শাহাদাতকে কিল ঘুষি মেরে পালিয়ে যেতে থাকে। ঠিক একই সময়ের মধ্যে আরো একজনকে দেখা যায়- শাহাদাতের পিঠে কিছু একটা দিয়ে আঘাত করতে।
শাহাদাতের উপর হামলা করার ঠিক ১ মিনিটের মাথায় ফৌজদারি মোড়ের দিকে দৌঁড়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পরে শাহাদাত। এরই মধ্যে কিশোর বয়সের আরো কয়েকজন এসে শাহাদাতকে ফুটপাত থেকে ওঠানোর চেষ্টা করে। সে সময় সাহায্য করতে এগিয়ে আসা সেই পাঞ্জাবি-টুপি পরা ব্যাক্তি এবং আরো কয়েকজন কিশোর মিলে শাহাদাতকে একটি রিকশায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং শাহাদাতের বন্ধু মিনহাজ ও ফারহান বলেন, শুক্রবার বিকালে শাহাদাত বন্ধুদের সঙ্গে পার্কে ঘুরতে যায়। এ সময় সিফাত, মুজাহিদ, হাসিব ও রতন নামে কয়েকজন যুবকের নেতৃত্বে শাহাদাত ও তার বন্ধুদের উপর হামলা করা হয়। হামলাকারীরা তখন শাহাদাতকে টার্গেট করে মারতে শুরু করে। সবাই পার্কের ভেতরের দিকে পালিয়ে গেলেও শাহাদাত পার্কের পূর্ব গেইট দিয়ে বের হয়ে পালাতে চেষ্টা করে। এ সময় এক যুবক তার পায়ে আঘাত করে। অন্যান্যরা কিল-ঘুষি দেয়। পরে আরেক যুবক তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিঠে আঘাত করে রক্তাক্ত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় শাহাদাতকে প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু জরুরি বিভাগে তার চিকিৎসা শুরুর আগে সে মারা যায়।
মিনহাজ ও ফারহান জানান, কি কারণে তারা অতর্কিতভাবে হামলা করল এটাই আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।
এ ঘটনার পর ওইদিনই (শুক্রবার সন্ধ্যায়) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে ওসি জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
এসআইএইচ