৩ দিনের ছুটিতে পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার
জন্মাষ্টমীসহ টানা ৩ দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে অবকাশ যাপনে লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসছেন। দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনাও বৃদ্ধি পেয়েছে সমুদ্র সৈকতে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস-রেস্ট হাউসগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। এই ৩ দিনে কক্সবাজারে ৬ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সকাল থেকে সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী (সায়মন) পয়েন্টে লক্ষাধিক পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
পর্যটকদের সমুদ্রস্নান, টায়ার নিয়ে ঢেউয়ের সঙ্গে দুল খাওয়া, সাঁতার কাটা থেকে শুরু করে সাগরের সঙ্গে তাদের গভীর মিতালী পরিলক্ষিত হয়। শুধু তাই নয়, বিচ বাইক, ঘোড়া ও জেটস্কির চালকরাও পর্যটকদের রাইড দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
হবিগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক দম্পতি পলাশ শর্মা ও মিনা বলেন, জন্মাষ্টমীর ছুটিতে আমাদের ইচ্ছে ছিল কক্সবাজার ঘুরতে আসব। ছুটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চলে এলাম কক্সবাজারে। এখানে খাবারের দাম ও হোটেলের রুম ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে মনে হলো। যা গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় অনেকটা কম। গতকাল সকালে কক্সবাজার পৌঁছালাম। সমুদ্র সৈকতে এসে অন্যদের আনন্দ দেখে নিজেদের আনন্দ আরও বেড়ে গেল।
রাজশাহী থেকে আসা পর্যটক ইয়াসমিন বলেন, আজ সকালে এসেই ২ দিনের জন্য রুম নিলাম। ভেবেছিলাম কক্সবাজারে পর্যটক কম হবে কিন্তু এসে দেখতে পাচ্ছি অনেক পর্যটক। পুরো সৈকত জুড়ে পর্যটক আর পর্যটক।
এদিকে গত কয়েকদিনের বিরূপ আবহাওয়া ও লঘুচাপের কারণে লন্ডভন্ড হয়ে যায় কক্সবাজার সৈকতের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা। সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত সৈকত এলাকায় বড় বড় ঢেউয়ের তোড়ে বিভিন্ন এলাকার বালু সরে যাচ্ছে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। ভাঙনের কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। এরপরেও সৈকতে পর্যটকের সংখ্যা কোনোভাবেই কম হয়নি। সৈকতের ভাঙা অংশে দাঁড়িয়েও পর্যটকরা উপভোগ করছেন কক্সবাজারের সৌন্দর্য।
বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুব আলম বলেন, আজ সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে অনেক পর্যটক হয়েছে। এত বিরূপ আবহাওয়ায় এভাবে পর্যটক বেড়ে যাবে তা কল্পনাও করিনি। সকাল থেকে সৈকতের ৩-৪টি পয়েন্ট থেকে পর্যটকরা নামছেন। কেউ কেউ দলবদ্ধ হয়ে সৈকতে নামছেন, কেউ ঘোড়ায় চড়ে মজা করছেন, ছবি তুলছেন আবার শিশুরা পানির কাছে মাটির ঘর বানিয়ে আনন্দে মেতেছেন। তাদের সচেতন করতে আমরা মাঠে রয়েছি। মাইকিংয়ের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সচেতনতার ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সী সেইফ লাইফ গার্ডের সদস্য মো. ইউসুফ বলেন, আমরা ওয়াচ টাওয়ার থেকে পানিতে নামা পর্যটকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখছি। কেউ যেন গভীর পানিতে না নামেন সে বিষয়ে সজাগ করা হচ্ছে। নিজেরা পানিতে গিয়ে তাদের সচেতন করছি। আর দূরে অবস্থান করা পর্যটকদের বাঁশি দিয়ে অ্যালার্ট করছি।
কক্সবাজার গেস্ট হাউস-রেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কক্সবাজারে প্রায় ৩ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এই তিন দিনে প্রায় ৬ লাখ পর্যটক কক্সবাজার আসবেন বলে ধারণা করছি। ইতোমধ্যে অধিকাংশ হোটেলের ৭০ শতাংশ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। হোটেল ভাড়াও সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ নজরদারিতে রয়েছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটন স্পটগুলোতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাদা পোশাকধারী টিমসহ কয়েকটি টিম কাজ করছে।
এসজি/