ইওএনওর সামনে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যানের নাজেহাল
কক্সবাজারের মহেশখালীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ইউএনওর উপস্থিতিতে এক রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ হত্যা ও ধর্ষণ মামলার হুমকি দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এ ব্যাপারে মহেশখালী থানায় সাধারণ ডায়রী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত ১৬ আগষ্ট মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এঘটনা ঘটে। মহেশখালী দিনেশপুর বিটের অধীনে শাপলাপুর গোরকঘাটা সড়কের চিতারঝিরি ব্রিজের লাগোয়া এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর রাস্তা তৈরি করাতে বাঁধা দেন রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলফিকার আলি ও তার অধীনস্থ দুই বিট কর্মকর্তা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাপলাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল খালেক চৌধুরী রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি ও মহিলাদের লেলিয়ে দিয়ে ধর্ষণ মামলা দেওয়ার কথাও বলেন।
শাপলাপুর বিট কর্মকর্তা রাজিব ইব্রাহিম ও দিনেশপুর বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুনায়েদ জানান, বন বিভাগের বাঁধা অমান্য করে পাহাড় ও বনের গাছ উজাড় করে রাস্তা তৈরি করেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক চৌধুরী। পাহাড় কর্তনের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করে রাস্তা নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে মূলত বন বিভাগ চেয়ারম্যানের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। শুধু তাই নয় পাহাড় ও গাছ কেটে পানের বরজ না করতে নিষেধ করলে সেখানে ও চেয়ারম্যান হস্তেক্ষেপ করেন বলে বনবিভাগের অভিযোগ। এই দিকে বন ধ্বস করে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ ও পান বরজ করতে বনবিভাগ বাধা দিলে বন বিভাগের উপর ক্ষিপ্ত হন ইউপি চেয়ারম্যান।
সরকারী সম্পদ রক্ষায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তাসহ বনবিভাগের লোকজন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত (যার নং ৭৫৯) জিডিতে উল্লেখ করা হয়। চরম হুমকিতে পড়েছে বন্যপ্রাণী ও বনাঞ্চল শুধু নয় বনের পাহারাদাররা রয়েছেন জীবনের নিরাপত্তা হীনতায়। এ ভাবে গায়ের জোরে সড়কটি নির্মিত হলে শত বছরের গর্জনসহ বিভিন্ন প্রজাতি গাছ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে দাবী বনকর্মীদের।
বন বিভাগের দিনেশপুর বিট কর্মকর্তা মো. জুবাইর বলেন, সংরক্ষিত বনের বনাঞ্চলটি ধ্বস করে সড়ক নিমার্ণ করায় সরকারী সম্পদ বনাঞ্চল রক্ষার জন্য রাস্তার কাজে বাঁধা দিলে স্থানিয় প্রশাসনের সহযোগিতায় চেয়ারম্যান তৈলে বেগুনে জ্বলে উঠে বিভিন্ন ফন্দি আটেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মহেশখালীর সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, পাহাড় না থাকলে মহেশখালী দ্বীপের অস্তিত্ব থাকবেনা।
মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলফিকার আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, বনের ভেতর রাস্তা করার কোনো নিয়ম নেই। চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক ক্ষমতার অপব্যবহার করে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে (ইউএনওর) সামনে অকাথ্যভাষায় গালিগালাজ করে এক পর্যায়ে আমাকে ধমক দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন, এবং মহিলা সংক্রান্ত মামলা জড়িয়ে দিবেন। আপনাকে চীফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট পর্যন্ত নিয়ে যাব। এ ছাড়াও অস্ত্র শুধু আপনার একার নাই, আমারও আছে বলে হুঙ্কার দেন। এ ব্যাপারে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আবদুল খালেক জানান, রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করিনি। তিনি আমার বিরুদ্ধে জিডি করেছেন তার অভিযোগ সত্য হলে এটি তদন্তে প্রমান হবে। এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়াছিন জানিয়েছেন আমি বিষয়ে মূখ খুলতেৃ পারবোন। চট্রগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের তত্বাবধানে মহেশখালী ও গোরকঘাটা রেঞ্জ। তাই উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি এবিষয়ে অবগত রয়েছেন।
একজন চেয়ারম্যানের কাছে বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী এভাবে নাজেহাল হওয়া সত্যই দুঃখ জনক। মহেশখালীতে বন বিভাগের কর্মকর্তা নাজেহাল হওয়া বা খুন হওয়া নতুন কোন ঘটনা নয়। ২০২০ সালে মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক কেরুনতলী বিটের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউচুপ সরকারী বন রক্ষা করতে গিয়ে বন খেকোদের হাতে নিহত হয়েছিলেন। তাই সরকারী কাজে বাঁধা দেয়া একটি অপরাধ।
এএজেড