দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়ার চাপে পিষ্ট মধ্য-নিম্নবিত্তরা
কিছুদিন ধরে অর্ধেক করে ডিম খেতে হচ্ছে। ছোট হয়ে গেছে মাছের টুকরোর আকারও। এভাবেই সংসারের ব্যয় সংকোচনের চেষ্ঠা করছেন ফেনী শহরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফরিদ হোসেন (ছদ্মনাম)।
শুদু ফরিদ হোসেনই নয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য আগে দুবেলা ডাল, ডিম বা ব্রয়লার মুরগি ভরসা ছিল। হঠাৎ দামের ঊর্ধ্বগতি নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। ফলে জীবনযাপনে নানা কায়দার কথা ভাবছে মানুষ।
ফেনী শহরের বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, মশুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনো মরিচ, আদা, এলাচ, ব্রয়লার মুরগি, চিনি ও ফার্মের ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তার মধ্যে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বিগত কয়েক বছরের তুলনায় রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পণ্য বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়তি দামে। প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা, পোল্ট্রি মুরগি ১৯০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা, মশুর ডাল ১২০ টাকা এবং চাল মানভেদে ৫ থেকে ১৩ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি ও ডিমের রেকর্ড দাম প্রসঙ্গে পৌর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, সম্প্রতি সবকিছুর দামই বৃদ্ধি পেয়েছে। সে হিসেবে পোল্ট্রি মুরগির উৎপাদন ব্যয় ১৫-২০ শতাংশ বেড়ে গেছে। আবার বাজারে চাহিদার তুলনায় যোগানও কিছুটা কম। যার ফলে দাম বাড়ছে।
পোল্ট্রি খামারি আলমগীর হোসেন বলেন, করোনার শুরু থেকে বস্তাপ্রতি মুরগির খাবারের দাম ৭০০-৮৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, অসুস্থ রোগীর প্রতি চিকিৎসকের সাধারণ পরামর্শ, দুধ-ডিম খান, শরীরে পুষ্টি যোগান। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাম বেড়েছে গরুর দুধ ও ডিমের। এখন স্থানীয় গরুর খামার থেকে সরবরাহ করা দুধের দাম সর্বনিম্ন ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে উঠানামা করছে।
আব্দুল আজিজ নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, মাত্র সপ্তাহের ব্যবধানে একটি দ্রব্যে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে গেছে। ব্যয় কমাতে বাইরে খাওয়া, ঘুরতে যাওয়া বা কাজের ফাঁকে ফাঁকে হালকা নাস্তা করা অনেক আগেই বাদ দিয়েছি। এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে একেবারে অসহ্য পর্যায়ে না গেলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া স্বল্প দূরত্বের জন্য রিকশার বদলে হেঁটে চলাকেই ব্যয় কমানোর উপায় হিসেবে বেছে নিতে হয়েছে।
এদিকে একইভাবে বেড়েছে বিভিন্ন সবজির দামও। শহরের বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজিভেদে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম ৬ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে আগের থেকে পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়েছে। যার জন্য সবজির দামও বাড়ছে।
দাম বৃদ্ধিতে প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতে প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে শহরের যুক্ত বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শাহীন আলম বলেন, কেনা দাম থেকে খুচরা পর্যায়ে মাত্র ৪০ থেকে ৭০ পয়সা বাড়তি দামে ডিম বিক্রি করছি। তারপরও ক্রেতা সংখ্যা কিছুটা কম। এ ছাড়া অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে ব্রয়লার মুরগিতেও তেমন লাভ হচ্ছে না।
এসএন