অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত কামরুজ্জামানের
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় হার্ট অ্যাটাক করেন কামরুজ্জামানের বাবা। তখন থেকে পরিবারের সিত্যসঙ্গী অভাব-অনটন। তবে নানা প্রতিবন্ধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন কামরুজ্জামান। পড়াশোনায় সহপাঠীদের মতো করে সুযোগ-সুবিধা না পেলেও ফলাফলে চমক ছিল।
ঠাকুরগাঁও সদরের মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মাতৃগাঁও এলাকার মোখলেসুর রহমানের ছেলে কামরুজ্জামান। মাতৃগাঁও মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে অর্থের অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কামরুজ্জামান বলেন, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার আগে আমার বাবা হার্ট অ্যাটাক করেন। চিকিৎসা নেওয়ার কিছুদিন পর সুস্থ হলেও আবার হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। তখন থেকে বাবা আর কিছু করতে পারেন না। আমি আর মা কাজ করি। আমার কাছে পড়াশোনাটা ছিল আকাশচুম্বী স্বপ্নের মতো। পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া আমার কাছে ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। স্কুলে পড়ার সময় শিক্ষকেরা আমার কাছে কোনো টাকা নিতেন না। বরং আমাকে তারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। এসএসসিতে জিপিএ -৫ পাওয়ার পর পড়াশোনায় আমি আরও মনযোগী হই। এইচএসসিতে জিপিএ- ৫ পাই। তার পরে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বৃত্তি পাই। এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার ইচ্ছে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হব। কিন্তু এখন কেউ বৃত্তি দেবে না। আমি কীভাবে যাতায়াত করব আর ভর্তি হব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। যদি সরকারের পক্ষ থেকে বা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসে তবেই আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।
কামরুজ্জামানে মা কামরুন নাহার বলেন, আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করি। ছেলেকে ঠিক মতো খাবার দিতে পারিনি। আমি যা আয় করি তা নিজে খেতে আর ওষুধ কিনতে চলে যায়। কষ্ট করে লেখাপড়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাইছে। এখন ঢাকা পাঠাব কেমনে আর খরচ জোগাড় করব কীভাবে। ভর্তির খরচ কোথায় পাব। সমাজের বৃত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তবে আমার ছেলেটা পড়তে পারবে।
বাবা মোখলেছুর রহমান বলেন, আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার ছেলেটা কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। আমার ছেলেটাকে আপনারা সাহায্য করুন।
মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শিক্ষক শাহজাহান আলী বলেন, ছেলেটি অনেক মেধাবী। তার বাবা প্রায় এক যুগ ধরে বিছানায়। তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালায়। সম্প্রতি সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ভর্তি ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য তার পরিবার দুশ্চিন্তায় রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তার পাশে দাড়ানোর। সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এ মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশের সম্পদে রূপান্তরিত করা যাবে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, কামরুজ্জামান বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তার পরিবারও বেশ অস্বচ্ছল। তার পড়াশোনা যেন থেমে না যায় সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
এসএন