শিক্ষার্থীর চুল কেটে রুমে তালাবন্ধ করে রাখলেন প্রধান শিক্ষক
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীর মাথার চুল বিকৃতভাবে কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মসলিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় চুল কাটার পর কয়েক ঘণ্টা ক্লাশ রুমে তালাবন্ধ করে রাখেন বিষ্ণু দেব নামে এক ছাত্রকে। এ ঘটনাটি ঘটেছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের ভানোর গান্ডিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এদিকে এ ঘটনার পর অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। অভিভাবক ও এলাকার লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
গত রবিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরদিন সোমবার ( ১৫ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ করেন পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্র বিষ্ণু দেবের বাবা বিনোদ দেব। এ ঘটনায় আনা অভিযোগ তদন্তের জন্য আজ মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শিক্ষক, নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্র ও তার অভিভাবকদের ইউএনও'র কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বালিয়াডাঙ্গী ইউএনও।
নির্যাতনের স্বীকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র বিষ্ণু দেবের পিতা বিনোদ দেব ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার পরও বিষ্ণু বাড়িতে না ফেরায় খোঁজাখুজি শুরু করি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তার মাথার চুল কেটে দিয়ে প্রধান শিক্ষক ক্লাশে বন্ধ করে রেখেছেন। আমি ছেলেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। সোমবার সকালে আমি বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক তার লোকজনকে দিয়ে আমাকে হুমকি দেয়। পরে আমি ছেলেকে নিয়ে ইউএনও’র কাছে যাই। তিনি ন্যায়-বিচারের আশ্বাস দেন।
পঞ্চম শ্রেণির আরেক ছাত্র মোমিন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমিসহ সহপাঠী জাহিদ হাসানের চুল আঁকাবাঁকা করে কেটে দিয়ে হেড স্যার সবাইকে বলেন-আমার কাছে ৭টি কাঁচি আছে, কেউ যদি একটু চুল বড় রাখে তাহলে তিনি এমন ভাবে কেটে দিবেন। আমরা কয়েকজন ভয়ে মাথা ন্যাড়া করে নিয়েছি।
কাঁদতে কাঁদতে বিষ্ণুর মা বলেন, ছেলেটা বাড়ি ফেরার পর থেকে ঘর থেকে বের হয়নি। কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই কেঁদে ফেলেছে। একটি মাত্র ছেলে আমার।
এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক মসলিম উদ্দীনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অতুল চন্দ্র সিনহা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, শিক্ষার্থীর মাথার চুল বিকৃত ভাবে কেটে দেওয়া এক ধরনের অপরাধ। শিক্ষকতা চাকরির নীতিমালা পরিপন্থী। বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা ওই শিক্ষককে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) যোবায়ের হোসেন বলেন, একজন অভিভাবক পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া স্কুলছাত্রের চুল বিকৃতভাবে কেটে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে মঙ্গলবার ওই প্রধান শিক্ষককে আমার কার্যালয়ে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। প্রধান শিক্ষকের দোষ প্রমাণিত হলে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩ বছর আগে প্রধান শিক্ষক তসলিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে ছেড়া পতাকা উড়িয়ে বিদ্যালয় পরিচালনার অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর তদন্ত কমিটি গঠন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এসআইএইচ