বিদ্যালয়ের সময়সূচি জানেন না শিক্ষিকা

বিদ্যালয়ের সঙ্গে বসবাস করেও বিদ্যালয়ে আগমন ও প্রস্থানের সময়সূচি জানেন না ভোলার দৌলতখান উপজেলার বিছিন্ন মদনপুরের ৩৮ নম্বর চর পদ্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শাহিনা।
বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল ১০টা ২০মিনিটে সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ের ভবনে উঠে দেখা যায়, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কোলাহল করছে, নেই কোনও শিক্ষকের উপস্থিতি। জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমাগো আপারা আইয়ে নায় অহনো।’ কোন সময় আসবে জানতে চাইলে তারা এক বাক্যে বলেন, ‘আরেকটু পরে আইব।’ কোথায় থেকে আসবেন? বলতেই দেখিয়ে দিলেন এক ম্যাডাম থাকেন ওই রুমে আরেকজন স্কুলের পিছনেই একটি এনজিও অফিসে থাকেন। প্রধান শিক্ষক সময় পেলে আসেন বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
রুমের দিকে এগুতেই বেরিয়ে আসেন শিক্ষিকা রুনা। স্কুলে সাংবাদিক এসেছে শুনে এনজিও অফিসে থাকা শিক্ষিকা সাহিনা ছুটে আসেন তরিঘড়ি করে। এ সময় সহকারী শিক্ষিকার কাছে সাহিনাকে স্কুলে আগমন ও প্রস্থানের সময় জানতে চাইলে তিনি কিচুক্ষণ নিরব থেকে পরে শিক্ষিকা রুনাকে জিজ্ঞেস করেন এবং তার স্কুলে কতজন শিক্ষার্থী আছে তা জানতে চাইলে সেটাও ওই শিক্ষিকাকে জিজ্ঞেস করেন তিনি।
জানা গেছে, মদনপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের পরে আসা এবং আগেই ছুটি দেওয়া হয়। এতে শিক্ষার মান ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে অভিভাবক মহলের।
আরও জানা গেছে, এখানকার বিদ্যালয়গুলো দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছে শিক্ষকরা। এতে বিপাকে পড়ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। সেইসঙ্গে ওই চরবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান দিনদিন কমে যাবার আশঙ্কা করছে অভিভাবক মহল।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন বিদ্যালয় খোলা হলেও খেয়া পার হয়ে শিক্ষকরা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে চলে আসেন। আবার নির্ধারিত সময়ের আগে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
নির্ধারিত সময়ের আগে বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুপুর ১টার পরে ফের খেয়া আসবে ৪টায়। তাই তারা আগে আগে চলে যায়। সরকারের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি দিয়ে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মান নষ্ট করছে ওইসব শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তারা।
একই অবস্থা দেখা যায় অন্য প্রাইমারী স্কুলে গিয়েও। শিক্ষিকা স্কুলের মধ্যেই বসবাস করেন কিন্তু নির্ধারিত টাইমে স্কুলে আসেন না আবার ছুটিও দিয়ে দিচ্ছেন দুপুর ১টার মধ্যে। বিদ্যালয়ের আশপাশের লোকজন ও খেঁয়া মাঝি বলেন, প্রতিদিনই দুপুর সাড়ে ১২টা বা ১টার মধ্যে এখানকার সকল স্কুল ছুটি দিয়ে শিক্ষকরা বাড়ি চলে যায়।
খেঁয়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককের সঙ্গে দেখা হলে স্কুল বন্ধ কেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, খেঁয়া পারাপারের অসুবিধার কারণে সাড়ে ১২টায় ছুটি দেওয়া হয়েছে। ৩৮ নম্বর চর পদ্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিহাব উদ্দিন বলেন, সাহিনা ম্যাডাম বিদ্যালয়ের সময় জানেন না এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে আমি কি বলার আছে।
এ ব্যাপারে দৌলতখাঁন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি আগামীকাল মাসিক মিটিংয়ে উপস্থাপন করব এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব ।
এসআইএইচ
