ক্রসিংয়ে ব্যারিকেড না দেওয়ায় রেললাইনে অবরোধ
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সময় মতো রেল ক্রসিং গেইট ব্যারিকেড না দেওয়ায় অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল ফুলবাড়ী-রংপুর সড়কে চলাচলকারী পথচারীসহ যানবাহন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় রেলের খালাসি মেটের সাথে স্থানীয় যুবকের হাতাহাতি হলে ঘণ্টাব্যাপী রেলপথ অবরোধ করেন স্থানীয়রা।
গতকাল সোমবার সকাল ১০ টা ৫২ মিনিটে ফুলবাড়ী-রংপুর সড়কের রেলঘুমটিতে এ ঘটনা ঘটে। এতে চিলাহাটি-পঞ্চগড়-খুলনা-রাজশাহী-ঢাকা পথে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে থানা পুলিশ ও জিআরপি পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে রেল চলাচলা স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি সকাল ১০ টা ৫২ মিনিটে ফুলবাড়ী স্টেশনে প্রবেশ করার জন্য আউটারে চলে আসে। কিন্তু ওইসময় দায়িত্বরত গেইটম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন গেইটে উপস্থিত না থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাদের চিৎকারে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে রফিকুল ইসলাম নামের এক স্থানীয় পান দোকানী ছুটে এসে ব্যারিকেডটি ফেলেন।
পরে স্থানীয়রা ক্ষীপ্ত হয়ে দায়িত্বরত ওই গেইটম্যানকে খুঁজে না পেয়ে রেলের খালাসি মেট জয়নাল সাথে স্থানীয়দের সাথে কথা কাটা কাটি শুরু হয়। এ সময় খালাসি মেট জয়নাল স্থানীয় যুবক সোহেলের ওপর চড়াও হয়ে কিলঘুষি মারেন। এ ঘটনায় ক্ষীপ্ত হয়ে স্থানীয়রা ঘণ্টাব্যাপী রেলপথ অবরোধ করে রাখলে পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি আউটারে এবং রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে চিলাহাটি-পঞ্চগড়-খুলনা-রাজশাহী-ঢাকা পথে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও জিআরপি পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী বাদশা মিয়া, রুবেল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম বলেন, রূপসা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি স্টেশনে প্রবেশ করার জন্য আউটারে চলে আসে। কিন্তু ওইসময় দায়িত্বরত গেইটম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন না থাকায় রেলক্রসিং ব্যারিকেড গেইটটি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। আমরা ওই গেইটম্যানকে অনেক খোঁজাখুঁজে করেও তাকে ঘটনাস্থলে পাইনি। পরে আমাদের চিৎকারে পান দোকানী রফিকুল ইসলাম ছুটে এসে ব্যারিকেড গেইটটি ফেললে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় পথচারীসহ চলাচলরত যানবাহন। ওই গেইটম্যানকে না পেয়ে খালাসি মেট জয়নাল আবেদিনের কাছে গেইটম্যানের খোঁজ করলে তিনি চড়াও হন। সেসময় স্থানীয় যুবক সোহেলকে কিলঘুষি মেরে জখম করেন।
তারা আরও বলেন, ওই গেইটম্যান প্রায় সময় বিভিন্ন দোকানে আড্ডা দেওয়াসহ ফোনে ব্যস্ত থাকেন। ইতোপূর্বেও গেইটম্যানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এই ব্যাডিকেড গেইটে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দায়িত্বরতদের অবহেলার কারণে যেন প্রাণহানি না ঘটে সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ট্রেনযাত্রী মো. সরওয়ার্দী ও তসলিমা বেগম বলেন, এক ঘণ্টা থেকে ট্রেন থেমে আছে। শুনেছি ফুলবাড়ী রেলক্রসিং গেইটে স্থানীয়রা অবরোধ করে রেখেছেন।
মারধরের বিষয়ে খালাসি মেট জয়নাল আবেদিন বলেন, স্থানীয়রা গেইটম্যানকে খুঁজে না পেয়ে আমার ওপর ক্ষীপ্ত হলে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করার এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। দায়িত্বরত ওই গেইটম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি নাস্তা করতে পাশের একটি হোটেলে গিয়েছিলাম। আসতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় রূপসা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি আউটারে চলে আসে। ওইসময় তাড়াহুড়া করে আমিসহ পান দোকানী রফিকুল ইসলাম দৌঁড়ে এসে দুইপার্শ্বের ব্যারিকেড নামিয়ে দেই।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী রেলস্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, ১০ টা ৫২ মিনিটে রূপসা এক্সপ্রেস ও তিতুমীর এক্সপ্রেসের সাথে ক্রসিং হওয়ার কথা ছিল,তার আগে গেইটম্যানকে অবগত করা হয়। কিন্তু সড়কে যানজট থাকায় গেইট ব্যারিকেডটি নামাতে দেরি হয়। এই কারণে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তবে স্থানীয়দের সাথে ওই খালাসি মেটের হাতাহাতির বিষয়টি আমার জানা নেই। স্থানীয়দের অবরোধে সকাল ১০ টা ৫২ মিনিট থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশ্রাফুল ইসলাম ও পার্বতীপুর রেল পুলিশের (জিআরপি) অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় সোহেল নামের এক যুবককে খালাসি মেট জয়নাল আবেদিন ঘুষি মেরে জখম করেন। এতে স্থানীয়রা ক্ষীপ্ত হয়ে রেলপথ অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এএজেড