হাসপাতাল আছে, চিকিৎসক নেই

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ সেন্টার হাসপাতালে বন্যপ্রাণী চিকিৎসক নেই। তাই দুর্ঘটনায় আহত বনের দুর্লভ ও বিপন্ন প্রাণীরা মারা যাচ্ছে চিকিৎসার অভাবে। এমন পরিস্থিতিতে সিলেট কিংবা ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না প্রাণীদের।
বন বিভাগ ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর দেওয়া তথ্য মতে, গত তিন বছরে বিভিন্ন প্রজাতির ২৩টি আহত প্রাণী মারা গেছে। গত এক বছরে উদ্ধার হওয়া ১৮৭টি প্রাণী এই রেসকিউ সেন্টারে রাখা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৫ সালে উদ্যানের জানকিছড়া ক্যাম্প এলাকায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ সেন্টার নির্মাণ করা হয়। এখানে আহত প্রাণীদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে একটি হাসপাতাল। উদ্বোধনের পর একটি প্রকল্প থেকে এই হাসপাতালে একজন চিকিৎসক দেওয়া হয়। কিন্তু এক বছরের মাথায় তিনি চলে যান। দীর্ঘ ৬ বছরেও পদ সৃস্টি না হওয়ায় এখানে আর কোনও চিকিৎসক দেওয়া হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, গত এক বছরে চিকিৎসার অভাবে গুরুতর আহত ৩টি প্রাণী মারা গেছে। প্রাণীগুলো হলো-২টি লজ্জাবতী বানর ও ১টি তিলানাগ ঈগল। এর মধ্য ২০২১ সালে লজ্জাবতী বানর দুটিকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েও বাঁচানো যায়নি।
স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংঘটন স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফের (সিউ) দেওয়া তথ্যমতে, গত তিন বছরে তাদের উদ্ধার করা ২০টি আহত প্রাণী মারা গেছে। প্রাণীগুলো হলো- ৬টি মেছোবিড়াল, ২টি প্যাঁচা, ১টি নিশিবক, ৩টি বনমোরগের বাচ্ছা, ৪টি পাতিসরালির বাচ্ছা, ১টি হলদে গালটিটি, ১টি তিলানাগ ঈগল, ১টি আজগর ও ১টি খয়ড়া মেছো প্যাঁচা।
এ বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, ডাক্তার না থাকায় আমরা নিজেরাই আহত প্রাণীদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করি। না পারলে উপজেলা ও জেলা সদর প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে নিয়ে যাই। সেখানে ভেটেনারি সার্জনরা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেন। তাদের চিকিৎসায় কিছু প্রাণী সুস্থ হয় আবার গুরুতর আহত প্রাণীরা মারা যায়।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা কর্ণচন্দ্র মল্লিক বলেন, নিরীহ প্রজাতির ছোট প্রাণীদের চিকিৎসা আমরা দিতে পারি। তবে হিংস্র প্রজাতির বড় প্রাণীদের চিকিৎসা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কারণ আমাদের কাছে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই।
এদিকে প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘ভেটেনারী চিকিৎসকের মধ্য খুব কমই আছেন যারা বন্যপ্রাণীদের চিকিৎসা করতে পারেন। ভেটেনারি চিকিৎসার ব্যবহারিক পরীক্ষায় বন্যপ্রাণীদের দেখিয়ে কোনও কিছু শিখানো হয় না। সেখানে গৃহপালিত প্রাণী গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী রাখা হয়। গৃহপালিত প্রাণীর থেকে বন্যপ্রাণীদের খাদ্যাভাস সম্পূর্ণ আলাদা হওয়ায় ভেটেনারি সার্জন দিয়ে বন্যপ্রাণীদের চিকিৎসা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণী হাসপাতালে তাকেই রাখা উচিত যার বন্যপ্রাণী নিয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান আছে।’
ওয়াইল্ডলাইফের সদস্য খোকন থৌনাউজম ও সোহেল শ্যাম বলেন, ‘এই হাসপাতালটি চালু করা এখন সময়ের দাবি। আহত প্রাণীদের মৃত্যু দেখে আমাদের কষ্ট হয়।’
এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের (সিলেট) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, চিকিৎসক না থাকায় গুরুতর আহত প্রাণীদের বাঁচানো যাচ্ছে না। এখানে ১ জন চিকিৎসক, ১ জন কম্পাউন্ডার, ৩ জন এ্যানিমেল কিপার ও ২ জন ক্লিনার হলেই হাপাতালের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব। চলতি মাসে এই জনবল চেয়ে অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এসআইএইচ
