বরিশালে অবৈধ যানবাহনের আধিক্য, ভোগান্তিতে মানুষ
বরিশাল নগরীতে বড় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট। ফিটনেসবিহীন অবৈধ যানবাহন, অতিরিক্ত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, সিএনজিসহ ছোট-বড় গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বরিশালের নথুল্লাবাদ, চৌমাথা, রুপালতী এই চারটি পয়েন্টসহ দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল মেরিন একাডেমিতে যাতায়েতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে যানজট লেগেই থাকে। এ ছাড়া নগরীর বটতলা, চৌমাথা, নতুন বাজার, সদর রোড, বাংলাবাজারে ছোট-বড় গাড়ির যত্রতত্র পার্কিং ও প্রধান সড়কের দুইপাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান, ফুটপাতে দোকান, মোড়ে মোড়ে সিএনজি ও অটোরিকশার অস্থায়ী স্ট্যান্ডের কারণে নগরীতে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
সাধারণ যাত্রীদের ভিড়ে তৈরি যানজটের কারণে থমকে যায় স্বাভাবিক জীবন। বরিশাল নগরীর সদররোড, নতুন বাজর, নথুল্লাবাদ থেকে রুপালতি পর্যন্ত প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগে ৪০-৪২ মিনিট। বরিশাল নগরীতে সবকটি পথে প্রায় ৫০ হাজার অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটো ও সিএনজির দাপট বেশি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, ‘আমার সকাল ১০টায় ক্লাস থাকে। সদররোড থেকে আমাকে সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালের উদ্দেশে রওনা হতে হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আমাকে সড়কে থাকতে হয়। বেশিরভাগ সময় যানজটের কারণে ক্লাসে যেতে দেড়ি হয়। এই যানজট নিরসনের জন্য কতৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার বলেন, ‘এই শহরে ট্রাফিক সক্রিয় না, এমনটাই আমার মনে হয়। যে যার মতো করে রাস্তায় গাড়ি চালায়। ফিটনেসবিহীন, অনুমদোনহীন গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন সিএনজি, ইজিবাইক, অটোরিকশা রাস্তায় বের হচ্ছে। বেশিরভাগেরই গাড়ি চালানোর কোনো লাইসেন্স নেই। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাড়া আদায়, যাত্রি তোলা যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং, ঢাকা বরিশাল হাই-ওয়েতে অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও গাড়ি চালানো, এসব কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়গুলোতে প্রশাসনের আরও কঠোর হতে হবে।
ইনফ্রা পলিটেকনিকের শিক্ষক নাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের শহরের নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডের অবস্থা খুবই খারাপ। বরিশাল-ঢাকাগামী বাসগুলো রাস্তার মাঝে যত্রতত্র ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। যার কারণে বড় ধরনের যনযটের সৃষ্টি হয়। এই যানজটের কারণে আমার চাকরি স্থলে পৌঁছাতে অনেক সময় দেড়ি হয়ে যায়। এ ছাড়া হলুদ অটোগুলোর কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই। যেমন ইচ্ছে তেমন করে রাস্তার মাঝখানে গাড়িগুলো দাঁড় করিয়ে রাখে। সে কারণেও যানজট লেগে থাকে। আমার অনুরোধ সকল যানবাহনগুলো একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালায়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, ‘আমাদের নগরীতে জনসংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে অনুমোদনহীন হলুদ অটোরিকশাও বেড়েছে। এর প্রতিকারের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। আমাদের নগর এলাকায় ফুট ওভার বিজ্র নির্মাণ করা দরকার। কিন্তু নগরীতে এমন কোনো নজির আমাদের চোখে পরেনি। এই যে দিন দিন যানজট বেড়ে চলছে, অবৈধ যানবাহন বাড়ছে এর ওপর এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরাকার বলে মনে করি। অনুমোদনহীন যানবাহনগুলোও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। তাবে নগরীর এই জনদুর্ভোগ কিছুটা কমে আসতে পারে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা ট্রাফিক বিভাগ দিন-রাত কষ্ট করে যাচ্ছি। আমাদের কেউ অফিসে বসে থাকেন না। এত কষ্ট করেও আমরা শতভাগ সফল না, তার কারণ আমাদের বরিশাল নগরীতে কোনো পরিকল্পিত রাস্তা নেই। যা আছে তাও প্রশস্ত না। নগরীর নথুল্লাবাদ নিয়ে আমরা হতাশ। কারণ নথুল্লাবাদে একটি বাস যদি রাস্তার মাঝখানে রাখে তবে পুরো মহাসড়ক আটকে যায়। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের আশেপাশে দোকান দিয়ে পুরো টার্মিনাল আটকে আছে। সেখানে ব্যবসয়ীরা স্থায়ী হয়ে গেছে। এদিকে নথুল্লাবাদ থেকে আমতলার মোড় পর্যন্ত যে চার লেনের সড়ক রয়েছে তার দুটি লেন এখন পার্কিং জোন এবং ছোট ছোট দোকান দিয়ে অধিকাংশ আটকে ফেলেছে, যা যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নগরীর গির্জামহল্লা, লঞ্চঘাট, ফলপট্টি, নতুনবাজার, বটতলার মোড় এসব স্থানেও কিন্তু পরিকল্পিত সড়ক নেই। এ ছাড়া নগরীতে অবৈধ লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের ফলে যানজট লেগেই থাকে। আমাদের হাতে যতটুক আছে সেটা দিয়ে যতটা সম্ভব সড়ক নিরাপদ রাখি।'
টিটি/