হত্যা মামলার মনগড়া এজাহার করার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে
‘কম্পুটারে আমাক নাম শুনালো। দেকনু যারা আমার ব্যাটাক মারিছে, তাদের অনেকেরই নাম নাই। আমি বুননু, এই কেস আমি করবু না। চল্যা আসিছুনু। ১০-১২ জন পুলিশ ঘির্যা ধইর্যা বলে, এই চাচা কই যান, মামলা কইরি যান।- এভাবে জোর কইরি আমাক দিয়্যা মামলা করাইছে। এতে জড়িতদের বাদ দেওয়া হইয়্যাছে।’
ছেলেকে হত্যা মামলার এজাহার প্রসঙ্গে এমন কথাই বলছিলেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ঝিকড়া গ্রামের বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দীন। গত রবিবার দুপুরে প্রতিপক্ষরা তার ছেলে মাইনুল ইসলাম সিলনকে কুপিয়ে আহত করে। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ পাঁচজনসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত সিলনের বাবা রিয়াজ উদ্দীন অভিযোগ করেছেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকের নাম এজাহারে উল্লেখ করেনি পুলিশ।’ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী নগরীর অলোকার মোড়ের একটি রেস্তোরাঁয় পরিবারের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত সিলনের মা কদবানু বেগম ও ছোট ভাই ইব্রাহিম আলী রতন উপস্থিত ছিলেন। সিলনের ৯ বছরের মেয়ে ও ৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন সিলনের স্ত্রী আলেয়া বেগমও। নিরক্ষর রিয়াজের পক্ষে তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান প্রতিবেশী সাজ্জাদ হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সিলন মারা যাওয়ার পরই হত্যার মূল অভিযুক্ত সম্রাটসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। তারপর পুলিশ রিয়াজ উদ্দীনকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে বলে, আসামিরা ধরা পড়েছে। এই পাঁচজনের বিরুদ্ধেই মামলা হবে। কম্পিউটারে এজাহার লিখে রিয়াজকে পড়ে শোনানো হয়। তখন রিয়াজ জানান, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অনেকের নাম এখানে নেই। তারপর পুলিশ আর তিনজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু জড়িত বাকিদের মামলায় আসামি করা হয়নি।’
রিয়াজ উদ্দীন বলেন, চারঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম তাকে ভয় দেখান যে, তাদের দেওয়া এজাহার অনুযায়ী মামলা না করলে ছোট ছেলে ইব্রাহিম আলী রতনকে ধরে এনে মাদকের মামলা দেওয়া হবে। তখন ভয়ে তিনি এজাহারে সই করেন।রিয়াজ দাবি করেন, ওসি তার কাছ থেকে সাদা কাগজেও একটি সই নিয়ে রেখেছেন।
রিয়াজ আরও বলেন, ‘এটি পারিবারিক বিরোধ নিয়ে খুন। কিন্তু পুলিশ প্রচার করছে মাদক ব্যবসার বিরোধে খুন। এ কারণে পুলিশ পাচ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে। সিলনকে হত্যার সঙ্গে জড়িতরাও মাদক ব্যবসা করেন। পুলিশ তাদের আড়াল করছে।’ তিনি প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু শুধু সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে লাভ আছে? এটি করলে তো নিহত ব্যক্তির পরিবার ব্যবসা করবে।’
ওসি বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন জড়িত কারও নাম বেরিয়ে এলে তাদেরকেও ধরা হবে।’ রিয়াজ উদ্দীনের কাছ থেকে সাদা কাগজে কোন সই নেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেছেন ওসি।
এসএসকে/এএন