গরু-মহিষের ‘জন্মনিবন্ধন’
নবজাতকের জন্মের পর তার জন্মনিবন্ধন করতে হয় ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি)। ঠিক একইভাবে গরু-মহিষের বাচ্চার জন্ম হলেও ‘জন্মনিবন্ধন’ করাতে হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সীমান্ত ফাঁড়িতে। বহুদিন আগে থেকেই এমন নিয়ম চালু আছে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে।
রাজশাহীর দক্ষিণপ্রান্তে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। সেখান দিয়ে গরু চোরাচালান করে দেশে ঢোকানো হয়, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সীমান্ত দিয়ে পাচার করে আনা গরু নদী পাড়ে এনে বলা হয়, এটি তার বাড়িতে পোষা গরু। গরু পোষা, নাকি পাচার করে আনা তা নির্ধারণ করতে হিমশিম খেতে হতো বিজিবিকে। তাই বিজিবিই কৃষকের বাড়িতে জন্ম নেওয়া গরুর হিসাব রাখতে চালু করেছে ‘জন্মনিবন্ধন’ প্রক্রিয়া। এতে সুফলও মিলছে।
রাজশাহী শহরের ঠিক ওপারে পবা উপজেলার চর মাঝাড়দিয়াড় গ্রাম। সেই গ্রামের আশরাফুল ইসলাম সম্প্রতি গরুর জন্মনিবন্ধন করাতে যান বিজিবির চর মাঝাড়দিয়াগ সীমান্ত ফাঁড়িতে। সেখানেই কথা হয় আশরাফুলের সঙ্গে। তিনি জানান, এলাকায় নতুন গরু-মহিষের জন্ম হলেই সেটি ১০ দিনের মধ্যে বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়িতে আনতে হয়। গরু-মহিষের বাচ্চাটি দেখার পর বিজিবি সদস্যরা খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখেন। এতে গরু-মহিষের বাচ্চাটির বিবরণ লিখে রাখা হয়। গরু-মহিষটি বেচতে যাওয়ার আগে নিতে হয় ছাড়পত্র।
চর মাঝাড়দিয়াড় গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি আর পশুপালনই এ গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা। প্রতিটি বাড়িতে কমপক্ষে পাঁচটি থেকে ৫০টি পর্যন্ত গরু-মহিষ আছে। বিক্রি করতে যাওয়ার সময় আগে ঝামেলায় পড়তে হতো। এখন বিজিবি ফাঁড়ির ছাড়পত্র থাকে বলে সমস্যা হয় না। তবে জন্মনিবন্ধন করা এবং ছাড়পত্র নেওয়াটা একটু ঝামেলার।
গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পুরোটিই পদ্মা নদীর ওপারে, ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া। এই ইউনিয়নের সব গ্রামের মানুষকেই গরু-মহিষের জন্মনিবন্ধন করাতে হয়।
চর কানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বুলবুল হোসেন জানান, গরু-মহিষকে চরানোর জন্য সীমান্ত এলাকায় নিতে হয়। কাঁটাতারের বেড়ার দিক থেকে আসতে দেখলেই বিজিবি আগে সন্দেহ করত। এখন জন্মনিবন্ধন থাকার কারণে সমস্যা হয় না। তবে হাটের দিন গরু-মহিষ নিয়ে ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য মানুষের ভিড় লেগে যায়। তখন একটু ঝামেলা হয়।
চর আষাড়িয়াদহ ইউপির তথ্যমতে, পুরো ইউনিয়নে প্রায় ২২ থেকে ২৩ হাজার গরু-মহিষ আছে। সবগুলোরই জন্মনিবন্ধন করা আছে। এলাকার দুটি বিজিবি ক্যাম্প জন্মনিবন্ধনের কাজটি করে থাকে। এ জন্য কোনো টাকা লাগে না। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য খাতা থাকে দুটি। একটি খাতা থাকে মালিকের কাছে। সেখানে তার সব গরু-মহিষের হিসাব লেখা থাকে। একইরকম একটি খাতা থাকে বিজিবি ক্যাম্পে। গরু-মহিষ বিক্রি বা জন্ম গ্রহণের পর খাতা দুটি হালনাগাদ করে রাখতে হয়। তা না হলে পরবর্তীতে পড়তে হয় ঝামেলায়।
চর আষাড়িয়াদহ ইউপি চেয়ারম্যান মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘বছরের পর বছর এই জন্মনিবন্ধন ও ছাড়পত্রের প্রথা চলে আসছে। আমার গরু-মহিষেরও হিসাব দিতে হয় বিজিবিকে। এটা নিয়ে মানুষকে হয়রানির মধ্যেও পড়তে হয়। দেশের আর কোথাও এ রকম হয় কি না আমি জানি না।’
এ বিষয়ে বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোর পর একটি নদী। নদীটি পার হলেই গরু-মহিষ চেনার আর উপায় থাকে না। সে জন্য সীমান্তের চোরাচালান বন্ধের একটা চেষ্টা হিসেবে গরু-মহিষের জন্মনিবন্ধন ও ছাড়পত্রের নিয়ম করা হয়েছে। এতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। ভারতীয় গরু-মহিষ আর দেশে ঢুকতে পারে না। সীমান্তে অকাল মৃত্যুও কমে গেছে।’
এসএসকে/এএন