জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে বেড়েছে আ.লীগের তৎপরতা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে অওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের পাশাপাশি চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমও বেড়েছে।
নেতারা বলছেন, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠন এখন অনেক শক্তিশালী। আওয়ামী লীগের আমলেই রেকর্ড উন্নয়ন হয়েছে চট্টগ্রামে। তাই এখানকার সর্বস্তরের মানুষের জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই আছে।
নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাংগঠনিক টিমের সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠানো নিয়ে সম্প্রতি কিছু অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। এখন আর সেই অসন্তোষ নেই। নেতাদের ভাষায় এটা ছিল ভুল বোঝাবুঝি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, নগর আওয়ামী লীগের ১৫ থানার সাংগঠনিক কার্যক্রম তদারকির জন্য গঠিত ১৫ সাংগঠনিক টিমের সদস্যদের দিতে সম্প্রতি চিঠি প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু সেই চিঠি হাতে পেতে দেরি হওয়ায় নেতাদের মনে কিছুটা অসন্তোষ তৈরি হয়। সেই চিঠি দিয়ে অবহিত না করায় সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বাসভবনে একটি বৈঠকও হয়েছিল। বৈঠকে উপস্থিত কমিটির আহ্বায়করা চিঠি না পাওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের কাছে নগর আওয়ামী লীগের এক দায়িত্বশীল নেতার ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষের কথা জানানো হয়। পরে চিঠি হাতে পেয়ে অসন্তোষ কেটে যায়।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। গেল রমজান মাসেও নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন নেতাকর্মীরা। ইফতার পার্টিসহ প্রতিদিনই ছিল নানা কর্মসূচি।
নগর কমিটিসহ ওয়ার্ড পর্যায়ে কোনো ধরনের বিরোধ আছে কিনা, থাকলে তা নিরসনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। যে কোনো ধরনের সমস্যা আমরা আন্তরিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি।
১৫ থানার সাংগঠনিক কার্যক্রম তদারকির জন্য গঠিত ১৫ সাংগঠনিক টিমের চিঠি না দেওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে চিঠি দেওয়া হয়নি বিষয়টা এমন নয়। নগরীর অভ্যন্তরের অনেক দূরের গন্তব্যে চিঠি পৌঁছতে হয়তো একটু দেরি হয়েছে। কিন্তু চিঠি সবাই পেয়েছেন। এই নিয়ে অসন্তোষ নেই।
এদিকে নগর আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, ১৫ সাংগঠনিক টিমের আহ্বায়কের সাথে চারজন করে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সদস্য অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম চৌধুরী বাবুল ও সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু ১৫ থানার সাংগঠনিক টিম পূর্ণাঙ্গ করে চিঠি দেওয়ার আগে চার সদস্যের সমন্বয় কমিটির সদস্য নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌদুরী বাবুল ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে নিয়ে বসা হয়নি এমন অভিযোগ রয়েছে নেতাকর্মীদের নামে। তবে চিঠি হাতে পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আর কেউ প্রশ্ন তুলছেন না।
অপরদিকে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন চট্টগ্রামে। উদ্দেশ্য সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা। নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক বিরোধ নিরসন ও তৃণমূল কমিটিকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম জেলা সফরে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দলের নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় নেতারা প্রথমে দক্ষিণ জেলা নেতাদের নিয়ে আগামী ১৫ মে তৃণমূলের প্রতিনিধি সভা করবেন। এরপর উত্তর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা হবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এতে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অনেকে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, মহানগর আওয়ামী লীগের পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগেও নানা বিষয় নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ লেগে আছে। নির্বাচনের আগেই এসব বিরোধ নিরসন করা খুবই জরুরি। না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় ও ক্ষুদ্র পর্যায়ের বিরোধগুলো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নির্বাচন হতে আরো দেড় বছর। তাই বিরোধ নিরসনের যথেষ্ট সময় আছে।
এমএসপি