দায়সারা ভাবে চলছে রমেক হাসপাতালে আইসিইউ
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (আইসিইউ) মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। কিন্তু সেখানে এখন তিনটি অক্সিজেন পোর্ট নষ্ট, এছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সংস্কারের অভাবে বর্তমানে আইসিইউটি চলছে দায়সারভাবে।
আইসিইউতে ব্যাপক রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ফলে বিনা মূল্যে আইসিইউ সুবিধা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। ফলে প্রতিদিনের ব্যয়ভার জোগাড় করতে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন রোগীর স্বজনরা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত আইসিইউতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছয় মাসেরও অধিক সময় ধরে তিনটি বেডের অক্সিজেন ও গ্যাস আউটলেট নষ্ট হয়ে আছে। বর্তমানে ১০ বেডের আইসিইউর সাতটি বেডে রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর কার্যক্রম শুরু হওয়া আইসিইউর মুমূর্ষু রোগীদের হার্টের পরীক্ষার জন্য রাখা ইকো আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন প্রায় দুই বছর ধরে নষ্ট। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন এবং রক্ত ও শরীরের অন্য তরল পরীক্ষার বায়োকেমিক্যাল অ্যানালাইজার মেশিন।
বর্তমানে সময়মতো আইসিইউর বেড পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। কোনো বেড ফাঁকা হলেই প্রতিদিন কমপক্ষে তিন জন মুমূর্ষু রোগীর স্বজনরা তৎপর হয়ে উঠেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে বেড না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতাল রংপুর কমিউনিটি মেডিকেলে ভর্তি করা এক মুমূর্ষু রোগীর স্বজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, তার রোগীর অক্সিজেন পোর্ট নষ্ট থাকায় বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করেন। বেড ভাড়া, অক্সিজেন, ওষুধ ও লাইফ সাপোর্ট নিয়ে তাদের ১৩ দিনের মধ্যে প্রতিদিন খরচ হয়েছে ২৫-২৯ হাজার টাকা। অথচ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তার রোগী ভর্তি থাকলে যে ওষুধটি হাসপাতালে পাওয়া যেত না শুধু সেটি কিনে আনতে হতো।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জনতা রংপুরের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মামুনুর রহমান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, রংপুর বিভাগীয় হাসপাতাল হিসেবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫০ বেডের আইসিইউ দরকার। তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিক যন্ত্রপাতির পাশাপাশি আইসিইউ পরিচালনার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান প্রয়োজন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে বর্তমানে চিকিৎসা সেবার অনেক ঘাটতি আছে।’
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসে ১০ বেডের নতুন ইনফেকশাস ডিজিজ আইসিইউ ভবন নির্মাণ হওয়ায় অনেকে অপেক্ষায় আছে। এটি চালু হলে দরিদ্র মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসাপ্রাপ্তি অনেক সহজ হবে এবং চাপ কমবে বিদ্যমান ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ)। তবে এটির কার্যক্রম শুরু হতে কত দিন লাগবে তা কেউ জানাতে পারেননি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রেজাউল করিম ঢাকাপ্রকাশকে বলেছেন, ‘আইসিইউর অচল বেড গুলো সচল করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে চাহিদা দেয়া হয়েছে। তিনটি অক্সিজেন পোর্ট নষ্ট হয়ে আছে। অনেক আগে স্থাপন করা নষ্ট মেশিনগুলোর স্থানে নতুন মেশিন নেয়ার জন্য হাসপাতালের ক্রয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আইসিইউটি পূর্ণাঙ্গ চালু করতে যা প্রয়োজন এবং খরচ কেমন হতে পারে এর একটি ধারণা নেওয়ার জন্য স্পেক্ট্রা কোম্পানির প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন আইসিইউটি চালু করার জন্যও কাজ করা হচ্ছে। এক হাজার বেডের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন আসে অসংখ্য রোগী।’
জিএমএ/এএন