রংপুরে বিচারকের বিরুদ্ধে চিকিৎসক স্ত্রীর মামলা
রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক শ্রী দেবাংশু কুমারের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেছেন তারই স্ত্রী ও চিকিৎসক হৃদিতা সরকার। মামলায় ওই বিচারক ছাড়া আরও তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামানের আদালতে মামলাটি করা হয়। আদালত আগামী ২১ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার (৩২), তার বাবা সুধাংশু কুমার সরকার চয়ন (৬০), ফুফাতো ভাই নিলয় দে সরকার (২৭) ও চাচা রঞ্জন সরকার (৫০)। অভিযুক্তদের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায়।
রংপুরের আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিশেষ (পিপি) খন্দকার রফিক হাসনাইন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, একজন বিচারকের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর মামলার ঘটনায় আদালতপাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মামলার বাদী ডা. হৃদিতা সরকারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তিনি রংপুর মেডিকেল থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত আছেন।
এর আগে ২০১৫ সালের ১১ মে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার হালুয়াঘাট পূর্ব-বাজার এলাকার সুধাংশু কুমার সরকার চন্দনের ছেলে দেবাংশু কুমার সরকারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
বিয়ের আসরে বর দেবাংশু কুমার সরকার ও তার পরিবার কনে পক্ষের কাছে নগদ ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। পরে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় হিন্দু আইনে বিয়ে সম্পন্ন হয়। কনের বাবা বিয়ের অনুষ্ঠানে বরপক্ষকে ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল (উপহার সামগ্রী) দেন।
কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই দেবাংশু কুমার সরকার নতুন একটি গাড়ি কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা দাবি করে তার স্ত্রী হৃদিতা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু হৃদিতা তার বাবার অক্ষমতার কথা জানালে স্বামীসহ শ্বশুড়বাড়ির লোকজন তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন।
এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও থেকে নেত্রকোনা হয়ে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে রংপুরে যোগদান করলেও যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পরকীয়া ও মাদক সেবনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন অভিযুক্ত দেবাংশু। স্ত্রী ও একমাত্র ছেলের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে আসামি দিন দিন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন।
এরই মধ্যে চিকিৎসক স্ত্রীর কাছে দাবি করা যৌতুকের টাকা না পেয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আসামি দেবাংশু কুমার সরকার। বিষয়টি জানাজানি হলে দেবাংশু ৩০ লাখ টাকা ছাড়া তার প্রথম স্ত্রী হৃদিতা সরকারের সঙ্গে সংসার করবেন না বলে জানান।
এদিকে, গত ২৮ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হৃদিতা সরকার ও তার স্বজনরা দেবাংশু কুমার সরকারের সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু তাকে না পেয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দেখা করে আদালত প্রাঙ্গণে অপেক্ষা করার সময় বিচারক দেবাংশু স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে মারধর শুরু করেন। এ সময় দেবাংশুর স্বজনরাও হৃদিতাকে মারধর করেন। এতে তার নাক-মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয়।
এ ছাড়া হৃদিতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে দেবাংশু সজোরে তার গলা চেপে ধরেন। এতে বাদী জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্বজনরা তাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পরে হাসপাতালে ২১ দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে গত ১৭ এপ্রিল রংপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহন না করায় আদালতের স্মরণাপন্ন হন হৃদিতা।
বাদীপক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রংপুর-১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর বিশেষ (পিপি) খন্দকার রফিক হাসনাইন সাংবাদিকদের জানান, রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিচারক রোকনুজ্জামানের আদালতে নালিশি মামলাটি করা হয়। বিচারক শুনানি শেষে আগামী ২১ এপ্রিল বাদীর জবানবন্দি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেছেন।
এমএসপি