বাঁধে ভাঙন: হাওরে হু হু করে ঢুকছে পানি
ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরের গুরমার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে একের পর এক তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের বোরো ধান।
রবিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল থেকেই পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর উপজেলার পাটলাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফলে উপজেলার গুরমার হাওরের বাঁধ ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকছে। এ ছাড়া হাওরে পানি বাড়ার কারণে এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সুনামগঞ্জের বৃহত্তম শনির হাওর ও মাটিয়ান হাওরের ধান।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এটা নতুন কোনো বাঁধ নয়। এ হাওরের পুরনো স্থায়ী বাঁধ। শনিবার (১৬ এপ্রিল) রাতে প্রবল বৃষ্টি হয়ে হাওরে ব্যাপক পানির চাপ সৃষ্টি হয়ে সকালে বাঁধ উপচে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে।
তারা আরো বলেন, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড গুরমা বাঁধের এ অংশটুকুর প্রায় তিনশ গজ বাঁধে কোনো কাজ করেনি। ফলে বাঁধের উপর দিয়েই উপচে এ বছর পানি হাওরে প্রবেশ করছে।
রবিবার সকাল ৯টার দিকে উজানের পানি বাড়তে থাকায় টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারসংলগ্ন বর্ধিত গুরমার ২৭ নং প্রকল্পের মাটি দেবে যায় ও স্থায়ী বাঁধ (আপর) উপচে হাওরে পানি ডুকতে শুরু করে। যার কারণে গুরমা হাওর অংশের খাউজ্যাউরি, নোয়াল, আইন্যা, কলমা ও গলগলিয়া ও ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা এলাকার হাওরগুলোর ফসলেও প্রবেশ করেছে পানি।
স্থানীয় কৃষক সুলাইমান মিয়া বলেন, এটা নতুন কোনো বাঁধ নয়। এটা হাওরের পাড়ে পুরোনো স্থায়ী বাঁধ। ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানি নদীতে অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় হাওরে ব্যাপক পানির চাপ সৃষ্টি হয়। আজ সকালে থেকে বাঁধ উপচে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে।
সমাজকর্মী আহমদ কবীর বলেন, গুরমার হাওরে আপর উপচে পানি ঢুকছে। আমরা সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আপরে বাঁশের চাটাই, বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টায় কাজ করছি। গত ১০ দিন ধরে ইউএনও স্যারসহ আমরা বাঁধে দিন-রাত পাড় করছি।
তাছাড়া সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় দুটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে। রবিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে উপজেলার কুশিয়ারা নদী-তীরবর্তী রমাপতিপুর গ্রামের গলাখাল বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। এর আগে গতকাল শনিবার রাতে নলজুর নদের পানি আধাকান্দি হাওরে ঢুকে।
স্থানীয় কৃষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার গোড়ারগাঁও ফসল রক্ষা বাঁধ, খাশিলা গ্রামের পাঠার হাওর বেড়িবাঁধ, সনুয়াখাই বেড়িবাঁধ, আধাকান্দি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ, রমাপতিপুর হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ, নলুয়ার হাওরের ভূরাখালী বেড়িবাঁধ ও হামহামিয়া জলকপাট বাঁধ রক্ষায় গত শুক্রবার রাতে ও শনিবার কৃষকেরা কাজ করেন।
আরও পড়ুন: সিলেট-সুনামগঞ্জে নদীতে বাড়ছে পানি, বাড়ছে উদ্বেগ
গতকাল সকালে পাঠার হাওর বেড়িবাঁধে ফাটল দিয়ে হাওরে পানি ঢুকে পড়ার উপক্রম হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুপম দাস, পাউবোর মাঠ কর্মকর্তা হাসান গাজী উপস্থিত হয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বাঁধ রক্ষায় কাজ করেন।
জগন্নাথপুর উপজেলার রমাপতিপুর গ্রামের বাসিন্দা আকরাম আলী বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে আজ বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি ফসল রক্ষা বাঁধটি রক্ষার জন্য। হাওরের অধিকাংশ ধান কাটার উপযোগী না হওয়ায় কৃষকেরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
তাহিরপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান জুনাব আলী জানান, আমি বর্তমানে শনির হাওরে অবস্থান করছি। পানির চাপে বাঁধগুলো দুর্বল হচ্ছে। এ হাওরের কুমাইরা খাল স্থায়ী বাঁধের (আপর) নিচের ফুলফা দিয়ে পানি ডুকছে। এ ছাড়া ভগিয়ানীর পশ্চিমের বাঁধের অবস্থা ভালো না।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা রবিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ছিল পাঁচ দশমিক ৮৭ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৪০ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটায় এ সময়ে পানি বেড়েছে ৭১ সেন্টিমিটার, পাটলাই নদে ৪৩ সেন্টিমিটার। সুনামগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৩ মিলিমিটার।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবীর জানান, পাটলাই নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় অবস্থা এখন খারাপের দিকে যাচ্ছে। ওয়াচ টাওয়ারসংলগ্ন বাঁধে মাটি ও বাঁশের চাটাই দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা চলছে।
এমএসপি