সিলেট-সুনামগঞ্জে নদীতে বাড়ছে পানি, বাড়ছে উদ্বেগ
ভারতের বরাক নদী দিয়ে নেমে আসা ঢল হ্রাস পাওয়ায় শনিবার (১৬ এপ্রিল) সিলেটের সুরমা নদীতে পানির চাপও কিছুটা কম ছিল। তবে সীমান্তঘেষা নদী যাদুকাটা, পাটলাই, রক্তি, বৌলাই নদীর পানি আরো বেড়েছে। যেকারণে হাওর রক্ষা বাঁধগুলো এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয়। ফলে এ অঞ্চলের হাওরের ফসল নিয়ে কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ছাতকে শনিবার (১৬ এপ্রিল) রাতে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সেখানে কয়েকটি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঝিগলী, খঞ্জনপুরের বাঁধ ভেঙে ফাটার হাওরে পানি ঢুকছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, বাঁধ রক্ষায় কৃষকরা সেখানে কাজ করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী শনিবার সন্ধ্যায় তাহিরপুরে বরাম হাওর থেকে ফিরে জানান, সুরমায় পানি কমছে, এটা সুখবর। বিপদ হবে চেরাপুঞ্জিতে আরো বৃষ্টি হলে।
তিনি বলেন, প্রশাসন, স্থানীয় কৃষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মিলে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে জেলার সবকটি হাওর বাঁধ তদারকি করছেন যাতে পানি চুঁইয়ে বা পানির চাপে বাঁধ ভেঙে না যায়।
তিনি বলেন, পানি বাড়ছে। আমরা এখানো ঝুঁকির মধ্যে আছি।
কর্মকর্তারা জানান, সুনামগঞ্জের যাদুকাটা, পাটলাই, বৌলাই, সুরমাসহ বেশ কয়েকাটি পাহাড়ি নদী মরা সুরমা হয়ে দিরাইর কালনী নদীর ভেড়া মোহনায় কুশিয়ারার সঙ্গে যোগ হয়। পরে এই প্রবাহ খালিয়াজুড়ি হয়ে ভৈরবে মেঘনা নদীতে গিয়ে পড়ে। অতএব সুরমা-কুশিয়ারা বেসিনে পানি কম থাকাটাও জরুরি।
জানা গেছে, গত তিন দিনে চেরাপুঞ্জিতে ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার বিকাল পর্যন্ত হাওরে ৫ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল পানি। সুনামগঞ্জে সুরমা বিপদ সীমা হচ্ছে: ৬ সেন্টিমিটার।
৩১ মার্চ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯৬ মিলিমিটার চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি ‘হাওর রক্ষা’ বাঁধ কোনোভাবেই ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চলে যোগ হয়েছে কালবৈশাখী শিলা-ঝড় বজ্রপাতসহ নানা দুর্যোগ। নববর্ষের শুরুতেই জগন্নাথপুর, শাল্লা ও বানিয়াচংয়ে কালবৈশাখী ও বজ্রপাতে মা-পুত্র-কন্যা এবং পিতা-পুত্রসহ আট জনের মৃত্যু ঘটে। অনেকের বাড়ির চাল উড়ে গেছে।
এদিকে, মাঠের ফসল রক্ষার কাজ অন্যদিকে বসতঘর উদাম, কোনদিকে কী করি, ’বলেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। এবার সিলেটে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ২০৫ হেক্টরে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টর চাষ হয়েছে। সব কিছু টিক থাকলে এ জেলা থেকে ১৫ লক্ষাধিক মে. টন চাল কৃষকের ‘গোলায়’ উঠবে।
এদিকে, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক শনিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের ভেঙে যাওয়া বাঁধ পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, হাওরে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণ আশানুরূপ হয়নি। বাঁধ নির্মাণ কমিটিতে অনিয়ম হয়েছে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে।
এমএসপি