আশানুরূপ ফলন হলেও দাম না থাকায় হতাশ সুপারি চাষিরা
কুড়িগ্রামের চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম না থাকায় চরম হতাশায় ভুকছেন চাষিরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, খরচ কম কিন্তু লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে বাড়ছে সুপারী চাষ। এ কারণে জেলাজুড়ে পতিত জমিসহ নিজেদের বসতভিটায় সুপারীর বাগান করে জীবিকা নির্বাহ করেন অধিকাংশ কৃষক। তবে চলতি মৌসুমে সুপারির আশানুরূপ ফলন হলেও দাম না থাকায় প্রান্তিক চাষিদের মুখে নেই হাসি। কারণ দেশের দক্ষিণ অঞ্চল সিলেট, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় এ বছর সুপারির চাহিদা না থাকায় সুপারির দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় সব চেয়ে কম। স্থানীয় বাজারে সুপারির ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন সুপারি চাষিরা।
জেলার কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী বাজার, বালারহাট, গংগাহাট, কাশিপুর, বেড়াকুটি বাজার, খরিবাড়ীবাজার, নেওয়াশী বাজার ও বড়ভিটা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সুপারি কেনা-বেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সুপারি চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে সুপারির দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বাজারগুলোতে সুপারি চাষিদের ভাষ্যমতে, গত বছর যে সুপারির পোন ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এখন সেই সুপারির প্রতি পোন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। একটু বড় সাইজের সুপারির প্রতি পোন ২৫০ টাকা সর্বোচ্চ দর। ফলে অর্ধেক দামও পাচ্ছে না কৃষকরা।
রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের নরেশ চন্দ্র রায় ও তুষার চন্দ্র রায়, তারা প্রত্যেকেই পাঁচ বিঘা জমিতে সুপারি চাষ করেন। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সুপারির ফলন ভালো হওয়ায় খুশি হলেও ফলন অনুযায়ী ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তারা দুজনেই চরম হতাশ।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা এলাকার সুপারি ব্যবসায়ী নবিউল ইসলাম জানান, এ বছর সুপারির ভাল ফলন হয়েছে। তাই এ বছর সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে সুপারির বাগান কৃষকদের কাছে ক্রয় করা হয়েছে। স্থানীয় বাজারে গত বছর ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা সুপারির পোন বিক্রি হতো। বাইরে সুপারির চাহিদা না থাকার পরও এ বছর ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পোন সুপারি বিক্রি হচ্ছে। তাই দাম না বাড়লে এ বছর ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে।
ফুলবাড়ী উপজেলার বালারহাট বাজারের সুপারি আড়তদার শাহজালাল ও সামচুল হক জানান, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সিলেট, খুলনা, কচুয়াসহ কয়েকটি জেলার আলা মজা সুপারির ব্যাপক আমদানি ও রংপুর অঞ্চলে দেশি সুপারির ফলন বেশি হওয়ায় সুপারির বাজারে ধস নেমেছে। গত বছর এ সময় ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৬ হাজার ৪০০ টাকা সুপারির কাওন ছিল। এখন আমরা বাজারে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা কাওন সুপারি ক্রয় করে বাড়িতে সুপারি মজার জন্য মাটিতে পুতে রাখছি।
তারা আরও জানান, সরকার বিদেশ থেকে সুপারির রং আমদানি না করে দেশে সুপারির রং কারখানার ব্যবস্থা করলে সুপারি চাষিরা লাভবান হবে। তা না হলে সুপারি চাষিরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। জেষ্ঠ্য মাসের দিকে সুপারির দাম কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ নিলুফা ইয়াছমিন জানান, ফুলবাড়ীতে ১১০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা সুপারির চাষ করেছে। এ বছর আশানুরূপ সুপারির ফলনও হয়েছে। তবে কি কারণে এ বছর সুপারির দাম না থাকার কারণটা আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রশিদ জানান, কুড়িগ্রাম জেলায় প্রচুর সুপারি চাষ হয়েছে। বিশেষ করে ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ীতে ব্যাপক সুপারি চাষ করেছে চাষিরা। সুপারির সঙ্গে তারা পানও লাগিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, এ জেলায় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ করেছেন প্রান্তিক চাষিরা। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সিলেট, খুলনা ও যশোরের আলা মজা সুপারির ব্যাপক আমদানি ও রংপুর অঞ্চলে দেশি সুপারির ফলন বেশি হওয়ায় সুপারির দাম কম। স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র থাকলে সুপারি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হতো এবং কৃষকরাও লাভবান হতো।
এসআইএইচ