সুদের ছোবলে বাবাহারা ৩ ভাইবোন!
সুদ ও ঋণের টাকা পরিশোধ করার চাপ সহ্য করতে না পেরে নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ঘোষপাড়া গ্রামের মাছ চাষি সেলিম সরকার (৩৫) আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার আত্মহননে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তিন শিশু সন্তান। বাবাকে হারিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে।
বুধবার (২৩ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবচেয়ে ছোট্ট ৪ বছরের শিশু ওমর ফারুক শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে দেখছিল চারদিক। বাবার জানাজায় শরিক হতে আসা স্বজনদের ভেতরে যেন খুঁজে ফিরছিল তার বাবাকে। কিন্তু সে জানে না তার বাবা আর ফিরে আসবেন না। তার বড় বোন নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া বৈশাখী বারবার মূর্ছা যাচ্ছিল! কাঁদতে কাঁদতে চোখের নিচে যেন কালি পড়ে গেছে! তাকে থামানোর চেষ্টা করছিল স্বজনরা। তার কান্না আর আহাজারিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিল না স্বজনরা। তার বড় ভাই ১৫-১৬ বছরের সায়েদ শুধু কেঁদেই চলছিল। প্রায় ১০ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকেই সে অসুস্থ। পড়া মনে না থাকায় বাদ হয়েছে স্কুলে যাওয়া। বাড়িতে বসে বসে দর্জির কাজ শিখছে। এখনও মাঝে মাঝে তার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। বাবাকে অকালে হারিয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ সায়েদকে থামাতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন স্বজনরা!
এ সময় তাদের তিন ভাইবোনের এতিম হয়ে যাওয়ার কষ্ট অনুভব করছিল কেউ কেউ।
এদিকে তাদের কান্না আর হাহাকার দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অনেকে। বিক্ষুব্ধ স্বজনরা বার বার সুদি কারবারিদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের গোষপাড়া গ্রামে ঋণের বলি হয়ে বিষপান করে আত্মহননের পথ বেছে নেন মাছ চাষি সেলিম সরকার। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বিকালে তার মৃত্যু হয়। নিহত সেলিম সরকার ওই গ্রামের মৃত ইউনুস সরকারের ছেলে।
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, ওই যুবক দীর্ঘদিন থেকেই পুকুরে মাছ চাষ করেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি জমিতে ধান চাষ ছাড়াও বাড়ির পাশেই চায়ের দোকান করেন তিনি। কিন্তু পুকুরে মাছ চাষ করতে গিয়ে পাশের গ্রামের একজনকে শেয়ার নেওয়া ছাড়াও আনুষাঙ্গিক খরচ যোগাতে স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নেন। এর বাইরে একটি এনজিও থেকেও ঋণ নেন তিনি। সম্প্রতি ওই সুদি ব্যবসায়ীরা তাকে সুদসহ টাকা দিতে চাপের পাশাপাশি হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। এ নিয়ে মানসিক চাপে ছিলেন সেলিম ও তার পরিবার। এছাড়া, ওই এনজিওর লোকজন মঙ্গলবার, দুপুরে তার বাড়িতে এসে বকেয়া কয়েকটি কিস্তি দিতে চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি তার স্ত্রীকে কড়া ভাষায় কথা বলে যান। দুপুরের পর বাড়ি ফিরলে তার স্ত্রী এ ব্যাপারে সেলিমকে জানান। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে পুকুরে ব্যবহারের জন্য ঘরে রাখা তরল বিষ পান করেন সেলিম। পরিবারের সদস্যরা তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে বিকালে তার মৃত্যু হয়। বুধবার বিকালে জানাজা শেষে স্থানীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
আরএ/