স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন
বরগুনায় স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৩ মার্চ) বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে বরগুনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অর্থ আদায় করে বাদীকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলম বেতাগী উপজেলার তালগাছিয়া দেশান্তরকাঠী গ্রামের মৃত মুনসুর আলীর ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তিনি পলাতক ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামির স্ত্রীর বাবা বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার সন্নাসী গ্রামের মজিবর রহমান ২০০৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বেতাগী থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, ১৯৮৭ সালে তার মেয়ে আসমা বেগমকে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে বিয়ে দেন। তাদের সংসার জীবনে চার সন্তানের জন্ম হয়। জাহাঙ্গীর যৌতুক লোভী হওয়ায় প্রায়ই বাদীর মেয়েকে নির্যাতন করত। এ ছাড়া আসামি তার একই গ্রামের জাহানারা নামে এক বিধবা নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়।
২০০৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীর বসতঘরের আড়ালে বসে প্রেমিকা জাহানারার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। বাদীর মেয়ে আসমা তা দেখে প্রতিবাদ করলে জাহাঙ্গীর চড়াও হয় এবং ঘরের পেছনের বারান্দায় নিয়ে তাকে বেদম মারধর করে মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তাক্ত জখম করে। একপর্যায়ে ঘর থেকে কেরোসিন এনে আসমার কাপড় ও শরীরে তা ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আসমার ছোট মেয়ে আরিফা দেখে তার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। এই ফাঁকে আসামি পালিয়ে যায়।
আগুনে আসমার ডান বাহু, বুকের নিম্নভাগসহ শরীরের নিম্নাংশ পুড়ে যায়। বাদী মামলা করার পরে তদন্ত করে এসআই জসিম উদ্দিন ২০ জুন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। আসমাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে বরিশাল পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করায়। এরপর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০০৯ সালের ৫ মার্চ মারা যায়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. নুরুল আমীন বলেন, আসামি আট বছর জেল হাজতে ছিলেন। হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক হয়েছেন। আসামির আপিল করতে হলে ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। দ্রুত সময়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।
এমএসপি