ধরলার বুকে সবুজের সমারোহ
কুড়িগ্রামের খরস্রোতা ধরলা নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর বুকে চরাঞ্চলের চাষিরা প্রতি বছরই বোরো চাষাবাদ করেন। ধরলার চরে জেগে উঠা পলি মাটিতে বোরোর বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। সবুজ রং ধারণ করেছে ধরলার বুক।
মাত্র এক যুগ আগেও পানির প্রবাহ ও প্রাণের স্পন্দন ছিল ধরলা নদীতে। এ নদীর প্রবল স্রোতের কারণে শঙ্কিত থাকতেন হাজারও বাসিন্দা। এখন পানি না থাকায় জেলার ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার ও বারোমাসিয়া নদীতে প্রায় ছোট, বড় চার শতাধিক চরের সৃষ্টি হয়েছে। ধরলার বুকে জেগে ওঠা পলি মাটিতে বোরো চাষাবাদ করেছেন কৃষকেরা।
শুধু ধরলা নয়, ধরলা সংলগ্ন বারোমাসিয়া, তিস্তা, নীলকমলসহ আশে পাশের সব নদ-নদীর বুকেই শতশত বিঘা জমিতে কৃষকরা ৭-৮ বছর ধরে বোরো ধান ও ভুট্টার চাষবাদ করছেন। বছরে একবার ধরলার বুকে চাষাবাদ করে কৃষকদের মাঝে সাময়িক স্বস্তি ফিরেছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা পাড়ের সোনাইকাজী এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সকিনা বেগম জানান, এক সময় এ ধরলা নদীতে তাদের ঘর-বাড়ি, আবাদি জমি সব কিছুই গিলে নিয়েছে। সেই ধরলা এখন শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই ধরলার আগ্রাসী রূপ দেখেছে। ধরলার তীব্র ভাঙনে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন। কয়েক বছর ধরে ধরলার বুকে জেগে উঠা পলিমাটিতে ৩-৪ বিঘা জমিতে রোবো চাষবাদ করছেন তারা। বোরোর বাম্পার ফলনের স্বপ্নও দেখছেন। প্রতি বছর বোরো চাষে লাভবান হলেও এ বছর ডিজেলের লিটার ৮৩-৮৫ টাকা ও ইউরিয়া সারের বস্তা ৯৫০ টাকা। শুধু ইউরিয়া নয় সব সারের দামও বেশি। ফলে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে চরম দুচিন্তা করছেন বোরো চাষিরা।
একই এলাকার কৃষক নুরজামাল ও আজিজ জানান, ৬-৭ বছর ধরে ধরলার বুকে বোরো চাষাবাদ করছেন তারা। প্রতি বছর বোরোর ভালো ফলন হয়। আশা করছি এ বছরও ভালো ফলন হবে। তারা আরও জানান, এবার আড়াই বিঘা বোরো চাষ করতে এ বছর খরচটা অনেক বেশি হয়েছে। ধানের দাম ভালো না থাকলে ধান চাষিদের লোকসান গুণতে হবে।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রশিদ জানান, চলতি মৌসুমে এ জেলার ৯ উপজেলার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমি। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদী অববাহিকার কৃষকরা ১ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদসহ অর্জন হয়েছে মোট ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৪০ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এ বছর বোরো চাষের ফলন ভালো দেখা যাচ্ছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূল থাকলে কৃষকরা বাম্পার ফলন পাবে এবং দামেও ভালো পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
এসএন