রংপুর চিড়িয়াখানা
সঙ্গীর অভাবে মারা গেছে বাঘটি, ধুকছে নিঃসঙ্গ সিংহটিও
দিনে দিনে প্রাণীশূন্য হয়ে পড়ছে রংপুর চিড়িয়াখানা। অব্যবস্থাপনার আখড়ায় পরিণত হয়েছে রংপুর বিভাগের একমাত্র চিড়িয়াখানাটি। পশুদের পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ না করা এবং চিকিৎসার অভাবে দিন দিন প্রাণীর সংখ্যা কমছে এখানে।
সঙ্গী হারিয়ে একা হয়ে পড়েছিল বাঘিনীটি। তবে বেশি দিন বাঁচেনি সেটিও। একটি মাত্র সিংহ রয়েছে। তাও হাড় জিরজিরে অবস্থা। চিড়িখানার অন্যতম আকর্ষণ ছিল জলহস্তি তিনটি। তারও একটি মারা গেছে।
অনেক প্রাণীর সঙ্গী নেই, ফলে প্রজনন হচ্ছে না চিড়িয়াখানায় থাকা পশু-পাখিদের। চিড়িয়াখানার অনেক খাঁচা প্রাণীশূন্য হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দর্শকের কোলাহলে মুখরিত চিড়িয়াখানাটি এখন প্রায় দর্শকশূন্য।
চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর চিড়িয়াখানার মূল আকর্ষণ ছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ৯০-এর দশকে প্রতিষ্ঠিত চিড়িখানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার ২২টিরও বেশি বাচ্চা প্রসব করেছিল। এখান থেকে ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখনায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বেশ কয়েকবার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ রংপুর চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার কুয়েতের আমিরকে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে উপহার দিয়েছেন। কিন্তু দেখভালের অভাবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা কমতে শুরু করে।
বেশ কয়েকটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে বলে দায়িত্বরত কর্মচারীরা স্বীকার করেছেন। বেশ কিছুদিন আগে একটি সিংহ মারা যাওয়ার পর অন্যটি একাকী বিষন্ন জীবনযাপন করছে। বার বার অনুরোধ করা সত্বেও এখানে সিংহের সঙ্গী দেওয়া হয়নি। এদিকে বর্তমানে যে সিংহী আছে তার বয়স ১৮ বছর পার হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন সর্বোচ্চ ১৬ থেকে ১৮ বছরের বেশি বাঁচে না সিংহী। যে কোনো সময় এটিও মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের।
রংপুর নগরীর হনুমানতলায় ১৯৯১ সালে ২২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত রংপুর চিড়িয়াখানা। এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, ভাল্লুক, জলহস্তি, ডোরাকাটা হায়েনা, ওয়াটার বাক, হরিণসহ বেশ কিছু বিরল প্রজাতির প্রাণী ছিল। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার গত ১৭ বছরে ২২টি বাচ্চা এবং সিংহ দম্পতি ছয়টি বাচ্চা প্রসব করেছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এসব প্রাণীদের বসবাস যোগ্য কোনো ঘর তৈরি করা হয়নি। ছোট্ট খাঁচায় কোনো রকমে তারা বাস করছে। বাসযোগ্য পরিবেশের অভাবে বাঘ-সিংহসহ অর্ধশতাধিক প্রাণী মারা গেছে প্রতিষ্ঠার পর থেকে। অন্যদিকে বখাটেদের উৎপাত, চিড়িয়াখানার প্রাণীকূলের বেহাল দশাসহ নানান কারণে দর্শনার্থী সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে।
দিনাজপুর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে রংপুর চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা আলেমা ছিদ্দিক দম্পতি চরম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এখন এখানে ভালো পরিবেশ নেই। চিড়িয়াখানার আকর্ষণ বাঘের খাঁচায় বাঘ নেই। একমাত্র সিংহটির জীবন প্রদীপ নিভু নিভু করছে। পশু-পাখিদের খাঁচাগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।
নগরীর আলমনগর এলাকার বাসিন্দা জমসেদ আলী জানান, স্বাস্থ্যের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়, প্রাণীদের পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয় না। চিড়িয়াখানায় দীর্ঘদিনেও সার্বক্ষণিক পশু চিকিৎসক নেই।
গাইবান্ধা থেকে বেড়াতে আসা ছোট্ট মাহিনের প্রশ্ন, ‘বাঘের খাঁচা শূন্য কেন?’ বাঘ দেখতে না পওয়ায় মন খারাপ মাহিনের।
এভাবেই বিভিন্ন জেলা থেকে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর আম্বার আলী তালুকদার স্বীকার করেন, একমাত্র বাঘটি সঙ্গীর অভাবে মারা গেছে। সিংহটিও একা দিন কাটাচ্ছে।
তবে আশার খবর দিলেন তিনি। অচিরেই দুটি বাঘ ও দুটি সিংহ ও দুটো জেব্রা আনা হচ্ছে বলে জানালেন। চিড়িয়াখানার যাবতীয় সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এসএন