গরিবের সরকারি চালে ছাত্রলীগ-কৃষকলীগের থাবা!
গ্রামীণ নারীদের চরম দারিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারি সহায়তা কর্মসূচির আওতায় অসচ্ছল, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তদের দুই বছর মেয়াদে মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়ার চূড়ান্ত তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব মৃধার মা ও কৃষক লীগের আহ্বায়ক ফোরকান মৃধার স্ত্রীর নাম। তালিকা প্রকাশের পর এলাকায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী সুবিধাখালী ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডে। তবে ইউপি সদস্য জানিয়েছে তাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে তা আমার জানা নাই।
জানা যায়, এ বছর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভিজিডি কার্যক্রমের নাম পরিবর্তন করে ভালনারেবের উইমেন বেনিফিট (ভিউব্লিউবি) করেছে। অনলাইনে আবেদনের পরে প্রথমে দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়ন পরিষদ যাচাই বাছাই করে ২০২৩-২৪ ইং অর্থ বছরে ৩৩০ নামের চূড়ান্ত তালিকা করেন। পরে তা অনুমোদনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়।
নিয়ম অনুযায়ী আগের বছর সুবিধা না নেওয়া অসচ্ছল, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা নারী, যাদের পরিবারের নিয়মিত উপার্জনক্ষম সদস্য বা নিয়মিত আয় নেই এমন নারী। যারা ভূমিহীন ও নিজ মালিকানা জমির পরিমাণ ০.১৫ শতকের কম। ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারী।
এছাড়াও যে সব পরিবার দৈনিক দিনমজুর হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে এবং মাটির দেয়াল/পাটকাঠি বা বাঁশের তৈরি ঘরে থাকে, যে পরিবারে কিশোরী বা ১৫-১৮ বছর বয়সী মেয়ে, অটিজম/প্রতিবন্ধী সন্তান এবং বিদেশ থেকে প্রত্যাগত অভিবাসী নারীরা এতে অগ্রাধিকার পাবেন।
তবে দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ঘটেছে বিপরীত ঘটনা। সরকারি দলের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব মৃধার মা মোসাঃ মিনারা বেগম (৪৪) ও উপজেলা কৃষকলীগের আহবায়ক মোঃ ফোরকান মৃধার স্ত্রী মনিরা নাসরিন (৪৩) এর নাম চেয়ারম্যানে মোঃ আনোয়ার হোসেন খানের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি করেন। জানিয়ে এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও ভয়ের কারণে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের কয়েকজন বিধবা ও অসহায় হতদরিদ্র নারী জানান, আমাদের তো কিছুই নাই। তারপরও আমরা একটা কার্ড পাইনা। শুনছি কৃষকলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা পাইছে। যাদের আছে তারাই খালি পায়। উপজেলা কৃষকলীগের আহবায়ক ফোরকান মৃধা বলেন, আমি রাজনীতি করি ঠিক আমাদের পরিবার অতটা সচ্ছল না। চাল দিলও খেতা পারবো না দিলেও খেতে পারবো। তবে চালটা দিলে একটু উপক্রিত হই।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব মৃধা বলেন, এবিষয় আমার কিছু জানা নাই। যদি আমার পরিবারের কারো নাম থেকে থাকে তাহলে আমি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে গিয়ে আমার নাম কেটে আনবো। আপনারা নিউজ না করলে ভালো হয়। এতে আমার মান সম্মান একটু ক্ষুণ্ন হবে আর কিছু হবে না।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক হাওলাদার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ নামের তালিকা দিতে বলা হয়েছিল আমি যাচাই-বাছাই করে যারা প্রাপ্য তাদেরকেই দিয়েছি। তাদের নাম কিভাবে অন্তর্ভুক্তি হয়েছে তা আমার জানা নেই।
ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন খান এর মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইয়েমা হাসান হাসান বলেন, আলাদাভাবে কোন নামের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা।
এএজেড