স্কুল মাঠে শহীদ মিনার ভেঙে টাওয়ার নির্মাণ
ভাষার মাসে বরগুনার কদমতলা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শহীদ মিনার ভেঙে গ্রামীণফোনের টাওয়ার নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের বাধায় আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার।
স্থানীয়রা জানান, এখানে একটি খেলার মাঠের চারপাশজুড়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে কলেজ লাইব্রেরীর পাশে ১২ ফুট বাই ১২ ফুট ও ১২০ ফুট উচ্চতার টাওয়ার নির্মাণের জন্য ঠিকাদার কাজ শুরু করলে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণ কাজ বন্ধ করে দেয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান ৩টির মাঠের পশ্চিম কোনে একটি শহীদ মিনার, গভীর নলকূপ, একাধিক ফলদ গাছ ও বাথরুম, যা গ্রামীণফোনের টাওয়ার স্থাপনের উদ্দেশে মাটি খননের কাজ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর শহীদ মিনারের একাংশ ভেঙে পাশে আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করা হলেও নারিকেলসহ ফলদ গাছ এবং পানির সংযোগ লাইন কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিকাল হলে আমরা এই মাঠে খেলাধুলা করি। টাওয়ার হলে আমাদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রভাষক জিয়াউল হক তুহিন বলেন, ১৯৬৪ সালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমিসহ হাজারো শিক্ষার্থী পড়াশুনা করেছি। কদমতলা বাজার সংলগ্ন অনেক জমি থাকা সত্বেও প্রতিষ্ঠান প্রধান অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য কাউকে কিছু না জানিয়ে বিপদজনক হাই ভোল্টেজের টাওয়ার নির্মাণের অনুমতি দেয় এবং ভাষার মাসে শহীদ মিনার, গভীর নল কুপ ও ফলজ নারিকেল গাছ কেটে ফেলেছে।
এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য কদমতলা স্কুলের প্রধান এবিএম বশির উদ্দিনের মুঠোফোনে একধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কদমতলা প্রাইমারী বিদ্যালয়ের সভাপতি ইমাদুল হক গাজী বলেন, গ্রামীণফোনের টাওয়ার কদমতলায় প্রয়োজন। কদমতলায় অনেক জমি রয়েছে। জমি চাইলে আমিও দিতে পারি। স্কুল মাঠে টাওয়ার বসানো ঠিক হবে না।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মো. রাকিব বলেন, বুধবার বিকালে আমার শ্রমিক মাঠি কাটা শুরু করে। স্থানীয়রা বাধা দিয়েছে। আমি কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি।
এই প্রকল্পে গ্রামীণফোন থেকে নিযুক্ত প্রকৌশলী আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩০ বছরের চুক্তি হয়। প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকা করে তাদের দেওয়া হবে। বেইজ দেওয়া হলে এক সঙ্গে একটি পেমেন্ট দেওয়া হবে।
তবে এ বিষয়ে কিছু জানতেন না বলে জানান কদমতলা হাইস্কুল ও কলেজের সভাপতি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমার আগে আমার বড় ভাই সভাপতি ছিলেন। চুক্তি হলে তার সময় হয়েছে। কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। চিন্তা করছি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে টাওয়ার বসানোর।
এ ব্যাপারে বরগুনার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, স্কুল মাঠে ফোনের টাওয়ার বসানোর কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে কদমতলা বাজার কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান মুন্সী বলেন, আমরা সবাই গ্রামীণ সিম ব্যবহার করি। টাওয়ার দরকার। স্কুল মাঠে না হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ মাঠের দক্ষিণ পাশে হলে ভালো হয়। আমাদের দাবি, গ্রামীণ ফোনের টাওয়ার হোক।
এসআইএইচ