পাবলিক টয়লেটে আওয়ামী লীগ নেতার আবাসিক হোটেল!
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পাবলিক টয়লেট দখল করে আবাসিক হোটেল নির্মাণ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ গাজী। কুয়াকাটা পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মাণ করা পাবলিক টয়লেটের ওপর তিনি এই আবাসিক হোটেল নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। ইউসুফ গাজী কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি।
ইউসুফ গাজী বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কলাপাড়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী জিহাদ হোসেনের নির্দেশনায় তিনি পাবলিক টয়লেটের ওপর স্থাপনা নির্মাণ করছেন।
পর্যটকদের সুবিধার্থে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকায় খাস জমিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর একেকটির ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তবে সমুদ্র সৈকত এলাকায় ৮টি পাবলিক টয়লেট সরকারি খাস জমিতে নির্মাণ করার কথা থাকলেও সাগর পারে নির্মাণ করা হয় ৫টি। বাকি তিনটি পৌরসভার ৪, ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে ব্যক্তি মালিকানা জমিতে নির্মাণ করা হয়। আর এ তিনটি শৌচাগার সৈকত এলাকার বাইরে থাকায় পর্যটকদের কাজে আসছে না।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কলাপাড়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী জিহাদ হোসেন বলেন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করার জায়গা মেয়র সাহেব দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশনায় এসব টয়লেট নির্মাণ করেছি। এগুলো এখন চালু আছে। তবে ৪নং ওয়ার্ডের টয়লেটটির জায়গা ইউসুফ গাজীর। মেয়র মহোদয় তাঁকে বলেছিলেন মনে হয়-নিচতলায় টয়লেট থাকবে দ্বিতীয়তলা তোমাকে ছেড়ে দেব। তবে সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় না মেয়র মহোদয় আর সে (ইউসুফ গাজী) বুঝবেন। আমি বলে এসেছি সরকারি ভবনের ওপর কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হবে না। বর্তমানে আবাসিক হোটেল নির্মাণকাজ বন্ধ আছে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দূরে ৪নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় মহাসড়ক লাগোয়া টুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন অফিসের সামনেই ইউসুফ গাজীর বাড়ি। তাঁর বাড়ির সামনে কয়েকটি দোকানের পাশে একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। এর ওপরে কয়েকটি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসলে এটি পাবলিক টয়লেট। বেশ কিছুদিন আগে এটি নির্মাণ করা হলেও এখনো চালু হয়নি। শৌচাগারের দ্বিতীয় তলায় ইউসুফ গাজী হোটেল করবেন সে জন্য বর্তমানে কাজ চলছে।
আ.লীগ নেতা ইউসুফ গাজী বলেন, 'এই জায়গাটা আমার। এটি আমি পাবলিক টয়লেটের জন্য দিতে চাইনি। কিন্তু মেয়র ও কলাপাড়ার ইঞ্জিনিয়ার রিকোয়েস্ট কইরা জায়গাটা নেছে। তাঁরা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিছে, তাঁরা ছাদ কইরা দেবে। আমি দ্বিতীয় তলায় স্থাপনা নির্মাণ করমু। তাই কয়েকটা কলাম দিছিলাম তাও এখন কাজ বন্ধ কইরা দিছি'।
কিন্তু নির্মাণকাজ এখনো চলছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউসুফ গাজী বলেন, 'বাহির থেকে সিঁড়ি নির্মাণ করছি, ওপরে হোটেল করমু। তয় উপরের কাজ বন্ধ রাখছি মেয়রকে বলসি আমারে লিখিত দেতে হইবে। মেয়র বলসে, আমি এলাকার বাইরে আছি আপনি কাজ চালায়া যান, আইসা দেখবো আনে'।
এসবের কিছু জানেন না বলে দাবি করে মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। তবে শুনছিলাম টয়লেটের ওপর স্থাপনা নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। এ খবর পেয়ে আমার অফিস থেকে কাজ বন্ধ করার জন্য চিঠি দিয়েছি।
আনোয়ার হাওলাদার বলেন, আমার সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি। আমি তাঁকে (ইউসুফ গাজী) বলেছিলাম, আপনি এটা কেন করছেন? গণশৌচাগার এখনো আমাকে হস্তান্তর করেনি। তিনি বলেন, আমি জনস্বাস্থ্যের ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি বলেছি, কথা বললেও আমি কি জানবো না। এরপরই তাঁকে চিঠি দিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, এসব টয়লেটের জায়গা জনপ্রতিনিধিরা নির্ধারণ করে দেন এবং তা খাস জমি হতে হয়। ব্যক্তি মালিকানা জমিতে নির্মাণ করার সুযোগ নেই। আমি আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম এ রকম হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএজেড