মাঘের শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত দক্ষিণের জনজীবন
'মাঘের শীত, বাতাসও আছে। চারিদিকে ঘন কুয়াশায় কাছের জিনিসটাও দেখা যায় না। এমন শীতে বাড়ির বাইরে যাওয়া যায় না। আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষেরা কষ্টে আছি।'- এ কথাগুলো বলছিলেন দক্ষিণের জেলা বরগুনার একজন শ্রমিক মো. সেলিম মিয়া। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ভোরে কাজে বের হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বাড়ি থেকেই বের হতে পারেননি তিনি।
শুধু সেলিম মিয়া নয়, তার মতো খেটে খাওয়া অনেক মানুষের অবস্থা এখন কর্মহীন। কারণ মাঘের তীব্র শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশার তীব্রতায় ঢাকা পড়েছে দক্ষিণের জেলা বরগুনার সড়ক-মহাসড়কগুলো। গত কয়েকদিন ধরে এখানে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়েই চলছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশার তীব্রতা বাড়ে। সেই তীব্রতা চলে দুপুর কিংবা বিকাল পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা স্টেডিয়াম সংলগ্ন সিদ্দিক মুন্সি নামের এক রিকশাচালক বলেন, 'গত তিন দিন ধরে একই অবস্থা। আজও ভোর থেকে ঘন কুয়াশা। বেলা গড়ালেও কোথাও একটুও রোদের দেখা পেলাম না। তাই শীতে কাবু হয়ে অনেকেই রাস্তায় কাজে বের হতে পারিনি।'
মাইঠা এলাকার ভ্যানচালক সোলাইমান বলেন, 'আজকের মতো অবস্থা এখন প্রায় দিনই হচ্ছে। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়ছে এখানকার খেটে খাওয়া মানুষগুলো।'
বরগুনা পৌর বাসস্ট্যান্ড এলাকার চা দোকানদার সোহেল বলেন, 'সকালে সূর্যের দেখা না পাওয়ায় ঘর থেকে মানুষ বের হচ্ছে না। তাই দোকানে বেচা-কেনা নেই। তবে বেলা বাড়ার পর কিছু ক্রেতাদের সমাগম ঘটে।'
একই কথা জানান বরগুনা মাছ বাজারের রাসেল, মাংস বাজারের আল-আমিন ও সবজি বাজারের বিক্রেতা রিয়াদ।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক পথে যাত্রীবাহী বাস এবং নদী পথে ফেরি ও লঞ্চের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন জেলার ৬ উপজেলার যাত্রীরা।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, কুয়াশার মাত্রা বেশি থাকায় সামান্য দূরত্বেও কিছু স্পষ্ট না দেখায় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনগুলোর হেডলাইট ও ফগ লাইট জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে। তারপরও প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
ঢাকা-বরগুনা মহাসড়ক রুটের বাসচালক আব্বাস হোসেন বলেন, ' কুয়াশার কারণে মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়েই যাচ্ছে। এ সপ্তাহে বরগুনায় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার খবর আমরা জানতে পেরেছি।'
পুরাকাটা-আমতলী রুটের ইউটিলিটি ফেরিচালক দোলন মিয়া বলেন, কুয়াশা বাড়লে ফেরি চলাচল ধীর গতি হয়। শীত কাল এলে নাব্য সংকট ও ঘন কুয়াশায় প্রায়ই নৌযান ও ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে অনেক সময় ফেরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন, বরগুনার সহকারী বন্দর কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, 'কুয়াশার কারণে নদী পথে লঞ্চ চলাচলে চরম ব্যর্থ হচ্ছে। লঞ্চ নির্দিষ্ট সময়ে ঘাটে পৌঁছাতে পারছে না।'
এ ব্যাপারে বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, 'কুয়াশার কারণে প্রায়ই খবর পাচ্ছি ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশা না কাটা পর্যন্ত চালকদের গাড়ি নিয়ে ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। একই কষ্ট নদী পথেও। ঘন কুয়াশার কারণে লঞ্চগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ঘাটে পৌঁছাতে পারছে না। আবার অনেক সময় চরেও আটকে যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'তীব্র শীতে এখানকার মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। অথচ এই জেলায় আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট কোনো অফিস না থাকায় মানুষ অনেক তথ্য জানতে পারছে না। আমাদের একটি আবহাওয়া অফিস দরকার।'
এসআইএইচ