শুঁটকি প্রস্তুতে ব্যস্ত সাগরপাড়ের জেলেরা

পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীতে কেমিক্যালমুক্ত শুঁটকি প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সহস্রাধিক শুঁটকি শ্রমিক। হঠাৎ শুঁটকি উৎপাদনে এত ব্যস্ততার কারণ এর চাহিদা। ক্রমবর্ধমান দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আহারের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে দেশীয় শুঁটকি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বেড়েছে শুঁটকির চাহিদা। ফলে বাড়াতে হচ্ছে শুঁটকির উৎপাদন।
কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর-মহিপুর মৎস্য ঘাট থেকে মাছ সংগ্রহ করে কুয়াকাটার শুঁটকি পল্লীগুলোতে নিয়ে যান জেলেরা। মহিপুর, আলিপুর, লেবুর চর, গঙ্গামতির চর, গোড়াখালসহ বিভিন্ন চরে মাছের শুঁটকি প্রস্তুত করা হয়। লইট্ট্যা, ফাইস্যা, ছুরি, ছোট চিংড়ি, ছোট পোয়া, রইস্যা, রূপচাঁদা, লাক্ষাসহ প্রায় ৩৫ জাতের মাছ শুঁটকি করা হয় এসব পল্লীতে।
নভেম্বর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ মাস চলে শুঁটকির ব্যবসা। কেমিক্যালমুক্ত ও পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে শুঁটকি তৈরি করায় এর চাহিদাও অনেক। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয় কুয়াকাটা থেকে। অন্যদিকে জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার সাগরঘেঁষা দ্বীপ-চরগুলোতে প্রতিবছরের মতো এবারও কয়েকটি শুঁটকি পলিস্নর গড়ে উঠেছে।
শীতের এ মৌসুমে কাঁচামাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত এখানকার কয়েক শত শুঁটকি শ্রমিক। এখানে বয়স্ক শ্রমিকদের সঙ্গে শিশুরাও রয়েছে। হরিনা, চাকাচালি, টাইগার, লইট্যা, ছুরি, পোপা, মাইট্যা, কামিলা, ফাইস্যা, রূপচাঁদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও নানা জাতের চিংড়ি নিয়ে দিন কাটে তাদের। মাথা ছেঁড়া, বরফ দেওয়া, শুকানো ও বাছাই করা, প্যাকেটসহ নানা কাজ নিয়ে দিন কাটে তাদের। শুকনো মৌসুমে প্রায় ৫ মাসের জন্য কয়েক হাজার লোক প্রতিবছর অস্থায়ীভাবে রাঙ্গাবালী উপজেলার সোনারচর, চরমোন্তাজের, বউ বাজার, চরআন্ডা ও মৌডুবিতে বসতি গড়ে তোলে।
প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলে, শুঁটকি কারবারির পাশাপাশি শিশুদেরও আগমন ঘটে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীতে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাদের মনকে ছুঁতে পারে না। পেটের তাগিদ ও দারিদ্র্যের চিন্তা সব সময় তাদের মনকে আচ্ছন্ন রাখে। সারাদিন কাজ করে তারা ১০০-২০০ টাকা পায়। অথচ বয়স্ক শ্রমিকরা সমপরিমাণ কাজ করে তাদের থেকে ৩-৪ গুণ বেশি টাকা আয় করে।
কুয়াকাটা শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ী আ. মালেক মৃধা বলেন, জেলেদের কাছ থেকে মাছগুলো কিনে নিয়ে আসার পরে বাছাই করে আলাদা করা, ময়লা ছাড়ানো, কিছু মাছে লবণ দেওয়া, কেটে মাছগুলো শুকাতে দেওয়া হয়। এভাবেই চলে আমাদের শুঁটকির কার্যক্রম।
দিনমজুর হিসেবে কাজ করা রেহেনা বলেন, প্রতিদিন সকালে আসি আমরা, মাছ শুকানো, উল্টানো, প্যাকিং করাসহ বিকাল পর্যন্ত কাজ করি। আমাদের জনপ্রতি ৩৫০ টাকা করে দেয়। পুরুষ, নারী ও বাচ্চারাও কাজ করে এখানে। পুরো মৌসুমেই আমরা এখানে কাজ করি।
কুয়াকাটা শুঁটকি মার্কেট সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, পর্যটকদের জন্য আমরা বিশেষভাবে সুস্বাদু, স্বাস্থ্য সম্মত, বিষমুক্ত শুঁটকির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি। কোনো ধরনের বিষের ব্যবহার বা অস্বাস্থ্যকর শুঁটকি যাতে কেউ তৈরি না করে সে ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট তদারকি আছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজের বউবাজার শুঁটকি পলিস্নর ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মণ শুঁটকি ১৫০০-১৬০০ টাকায় পাইকারের কাছে বিক্রি করা হয়। বেশির ভাগ শুঁটকি চলে যায় ভোলায়। আর ভোলা থেকে ঢাকায় চালান হয়। ঢাকায় নিয়ে তৈরি করা হয় মুরগি ও মাছের খাবার। ঢাকা থেকে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এসব শুঁটকি।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম বলেন, জেলার কুয়াকাটা ও রাঙ্গাবালীতে যারা মাছ শুঁটকি করে থাকে তারা বেশ অভিজ্ঞ এবং ভালো শুঁটকি বাজারজাত করে। প্রতিবছর প্রায় ১৩০-১৪০ টন শুঁটকি এ দুই উপজেলা থেকে উৎপাদন হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, শুঁটকি ব্যবসায়ীদের জীবনমান উন্নয়নে আমরা সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি এবং তাদেরকে আধুনিক সেবার আওতায় নিয়ে আসতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি।
এসজি
