দ্বীপের রানী ভোলা হানাদার মুক্ত আজ

তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব,শেখ মুজিব জয় বাংলা, বাংলার স্লোগানে মুখরিত হয় ভোলার অলিগলিসহ চারপাশ। ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস আজ ১০ ডিসেম্বর। দিবসটি উপলক্ষে ভোলা মুক্তি যোদ্ধা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ভোলা জেলা পরিষদ মিলনায়তনে মুক্তি যোদ্ধাদের সম্মর্ধনা দেওয়া হয়েছে। পরে মুক্তি যোদ্ধা পরিষদ ও মুক্তিকামী আপামর জনতার উপস্থিতিতে একটি বিজয় র্যালি ভোলা শহরের মুক্তি যোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সম্মুখ থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রদক্ষিণ করে জেলা পরিষদের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এসময় সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোহাম্মদ তৌফিক- ই-লাহী চৌধুরী (জেলা প্রশাসক ভোলা) সম্মানিত অতিথি সাইফুল ইসলাম বিপিএম পিপিএম (পুলিশ সুপার ভোলা), বীর মুক্তি যোদ্ধা আঃমোমিন টুলু (চেয়ারম্যান জেলা পরিষদ ভোলা) বিশেষ অতিথি মোঃ মোশারফ হোসেন উপজেলা চেয়ারম্যান ভোলা সদর, বীর মুক্তি যোদ্ধা দোস্ত মাহমুদ, বীর মুক্তি যোদ্ধা শফিকুল ইসলাম, বীর মুক্তি যোদ্ধা ও ভোলার প্রথম সাংবাদিক এমএ তাহের, বীর মুক্তি যোদ্ধা এম হাবিবুর রহমান, জহিরুল ইসলাম নকিব (যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামীলীগ ভোলা) সমাজসেবা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তারা বলেন আজ সেই স্মরনীয় ১০ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল দ্বীপের রানী ভোলা জেলা। সেদিন সকালে পাক বাহিনী ভোলার লঞ্চঘাট হয়ে ইলিয়াস মাস্টারের কার্গো লঞ্চ নিয়ে ইলিয়াস মাস্টারসহ এক যোগে পালিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলো।
সকালে এ খবর পেয়ে হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ ভোলার রাজপথে নেমে আসে। 'জয় বাংলা' 'তোমার নেতা, আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব' স্লোগানে স্লোাগানে মুখোরিত করে চারপাশ। বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠে ভোলার মুক্তিকামী মানুষ।
১৯৭১ এর ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের খবর আসতে শুরু করে, একইসঙ্গে পাকিস্তানী হানাদারেরা নিশ্চিত পরাজয় টের পেয়ে পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। ১০ই ডিসেম্বর তাদের পালিয়ে যাওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে শহরের ভোলার খালে বর্তমান (আলতু মিয়ার লঞ্চঘাট) ব্যারিকেড দিয়ে তাদের লঞ্চের গতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলো মুক্তিকামী জনতা।
এসময় তারা গুলি বর্ষণ করতে করতে পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে মিত্র বাহিনীর হামলায় কার্গো লঞ্চটি ডুবে গেলে পাকিস্তানী হানাদেরদের সকল সদস্য নিহত হয়ছে সেদিন। তবে পরে আবার জানতে পারলাম ইলিয়াস মাস্টার ও তার এক সহোযোগি প্রাণে বেঁচে যায়।
বক্তারা ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় (ওয়াপদা) পাকিস্তানী বাহিনীর অবস্থান ছিলো। ১০ ডিসেম্বর রাতে ওয়াপদা ঘেরাও এর পরিকল্পনা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু তারা পরাজয় জেনে আগে বাগেই সরে পরেন সেখান থেকে।
পরে তাদের পালিয়ে যাবার সময় ভোলার খালে আমরা প্রতিহতের চেষ্টা করি। পাকসেনাদের পালাবার খবরে হাজার হাজার জনতা রাজপথে নেমে আসে বিজয় উল্লাসে।
পাকসেনারা পালিয়ে গেলে ওয়াপদা থেকে ৩০ জন বীরঙ্গনাকে উদ্ধার করা হয়। তাদের চিকিৎসা শেষে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। সবার অংশগ্রহণে বিজয় র্যালী করি আমরা। এক অন্যরকম আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন।
এএজেড
