টিসির কথা শুনে ছাত্রের মামলা, ব্যাহত শিক্ষা ব্যবস্থা

বরগুনার আমতলীর আঠারগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইনে মামলা করেছিল ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র। এ নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, ম্যানেজিং কমিটির একের পর এক সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ পক্ষ-বিপক্ষের নানা কর্মসূচিতে ব্যাহত হচ্ছে ওই স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা। এমনকি ওই স্কুলসহ এর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলায়।
জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির মাসুম বিল্লাহ নামের এক ছাত্র আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বাদী হয়ে ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন ১৯৮০ এর ১২ এবং ১৩ ধারায় এ মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, আঠারগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিনের সঙ্গে জেএসসি পরিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহর পরিবারের মধ্যে বিবাদ চলছিল। এর জের ধরে গত ২৯ নভেম্বর আঠারগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষার হলে মাসুম বিল্লাহকে অকারণে বেত দিয়ে বেদম মারধর করে শিক্ষক রুহুল আমিন। এক পর্যায়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে না দিয়ে হল থেকে বের করে দেন তিনি।
শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহর অভিযোগ, বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানালে তিনি ব্যবস্থা নেননি। তাই ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জলিল মাতুব্বরকে জানালে তিনি পরীক্ষা নিতে শিক্ষক রুহুল আমিনকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারপরও তিনি পরীক্ষা নেননি। তাই নিরুপায় হয়ে আমতলী জুটিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে মামলা করি।
এ বিষয়ে আঠারগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জলিল মাতুব্বর বলেন, মাসুম বিল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে স্কুলে গিয়ে বিষয়টি আমি জানতে চাইলে শিক্ষক রুহুল আমিন আমাকে অপমান করে স্কুল থেকে বের করে দেয়। এখন উল্টো শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দিয়ে নানান কর্মসূচিসহ ফন্দি করছেন।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। মূলত ওই শিক্ষার্থী স্কুলেই আসে না। তাই তাকে টিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আর সেদিন স্কুলে এ ধরনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। ওই শিক্ষার্থী ওইদিন হলেই আসেনি। গত ২৮ নভেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ওই দিনও তো সে আসেনি। টিসিও তো দেওয়া হয়নি। তার আগেই টিসির কথা শুনেই এসব কাণ্ড ঘটানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জলিল মাতুব্বর ২৯ নভেম্বর ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে কথা বলছিলেন। আমি হলে থাকায় এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে যেতে বলায় তিনি আমাকে রিজাইন দিতে বলেন এবং লাঞ্ছিত করেন। এ সময় তিনি আমাকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ওই শিক্ষার্থীকে দিয়ে তিনি মিথ্যা মামলা করিয়ে আমাকে হয়রানি করছেন। আর এর জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিবাদেই উপজেলাজুড়ে এখন উত্তাপ বইছে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করেও ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে পাওয়া যায়নি। তবে একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বলেন, এভাবে যদি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে বিবাদ চলতে থাকলে তবে স্কুলের শৃঙ্খলা বলতে কিছুই থাকবে না। স্কুলে ভবিষ্যত পাঠদান নিয়েও শঙ্কায় তারা।
এসআইএইচ
