ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ঝালকাঠির লবণ শিল্প
কালের বিবর্তনে এখনও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ঝালকাঠির লবণ শিল্প। ঝালকাঠির উৎপাদিত লবণ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে ব্যাাংক ঋন না পাওয়া এবং ঝালকাঠিতে গ্যাস লাইন না থাকার কারনে লবণ মিলগুলোর আধুনিকায়ন সম্ভব হচ্ছেনা। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রনোদনা পেলে আরও প্রসারিত হবে ঝালকাঠির লবণ শিল্প। ঝালকাঠি বিসিক কর্তৃপক্ষও বলছেন লবণ শিল্প ঝালকাঠিতে প্রসারিত হচ্ছে, বিসিক ঝালকাঠির লবণ শিল্প প্রসারে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাবে।
স্বাধিনতার পরপরই মুলত ঝালকাঠির লবণ শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে। তখন কারখানাগুলোতে যাতা প্রক্রিয়ায় লবণ তৈরী হতো। ঝালকাঠির শহরের নদীর দুই তীরে পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠে ১৪টি লবনের কারখানা। এরপরে দেশে আধুনিক ভ্যাকুয়াম লবণ মিল চালু হলে তার প্রভাব পরে ঝালকাঠিতে। কমে আসে লবণ মিলের সংখ্যা। তারপরেও দেশের ৮টি লবণ জোনের মধ্যে ৫টি জেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি লবণ জোনের ১৩টি মিলের ৮টিই ঝালকাঠিতে। এই ৮টির মধ্যে সেন্টিফিউজ (সেমি ভ্যাকুয়াম) ৩টি ও ট্রিডিশনাল (সনাতন) ৫টি।
লবণ মিল মালিকরা জানান, ঝালকাঠিতে গ্যাসের লাইন না থাকায় তারা ভ্যাকুয়াম পদ্ধতির লবণ মিল চালু করতে পারছেন না। অন্যদিকে লবণ খাতে ঋন দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ না থাকায় লবণ মিলে কাংখিত উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছেনা। এছাড়া প্রনোদনা না পাবারও অভিযোগ রয়েছে তাদের।
লবণ মিল মালিক সমিতি কর্তৃপক্ষ জানান, বিসিক থেকে করোনাকালীন সময় ঝালকাঠি লবণ মিলগুলোতে ৬০ লাখ টাকা প্রনোদনা দেয়ার জন্য বরাদ্দ থাকলেও তারা পেয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। তবে বিসিক কর্তৃপক্ষ বলেছেন ৬০ লাখ টাকা শুধু লবণ মিলের জন্য নয় ঝালকাঠির পুরো কুটির শিল্পেই বরাদ্দ হয়েছিলো। ঝালকাঠির মিলগুলোতে দুই প্রকারের লবণ উৎপাদিত হয়।
একটি হচ্ছে ভোজ্য লবণ (প্যাকেটজাত) ও অন্যটি ইন্ডাষ্ট্রি সল্ট (পশুখাদ্য)। মাসে ৩ হাজার ৫শ টন ভোজ্য লবণ ও ৭ হাজার টন ইন্ডাষ্ট্রি লবণ উৎপাদিত হয়। প্রায় ৪০০ শ্রমিক ঝালকাঠি লবণ মিলগুলোতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা ট্রলার যোগে লবণ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার বড় জাহাযে বিদেশ থেকে আনা কেমিকেল ও কাচামাল কারখানায় খালাস করা হচ্ছে। এখান থেকে লবণ যাচ্ছে পদ্মার এপারের সবকটি জেলাসহ কুষ্টিয়া, পাবনা ও সাতক্ষিরায়।
বর্তমানে পদ্মা সেতু হওয়ায় ঢাকায়ও ঝালকাঠির লবনের বাজার সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। লবনের কাচামাল ও কেমিকেল আনা হয় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ভারত থেকে। স্থানীয়দের মতে লবণ শিল্পে বিখ্যাত হওয়ার কারনেই ঝালকাঠি বন্দর উপাধি পেয়েছিলো। তাই এই শিল্পের আরো অগ্রগতি হোক সে প্রত্যাশাই এখন সকলের।
লবণ মিলে কর্মরত শ্রমিক, পাইকার ও ব্যবসায়ী। ঝালকাঠি লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানালেন, গ্যাস, ব্যাংক ঋন ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঝালকাঠি লবণ শিল্প প্রসারিত করা সম্ভব হবে। জামাল শরিফ, সাধারন সম্পাদক, ঝালকাঠি লবণ মিল মালিক সমিতি।
ঝালকাঠি বিসিকের উপ ব্যবস্থাপক জানালেন, লবণ শিল্পে প্রসারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে। এছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকায়ও ঝালকাঠির লবনের বাজার তৈরী বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এএজেড