যাদের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক নয়
ইসলামী শরীয়তে যাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে তারা হলেন প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম, সুস্থ বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন ও নিজ বাসস্থানে অবস্থানকারী। বিভিন্ন কারণে রমজান মাসে কারও কারও ক্ষেত্রে রোজা না রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক কেন এবং কাদের ওপর রোজা না রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তা'আলা রোজা প্রসঙ্গে বলেন: হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। নির্দিষ্ট কিছু দিন। অতঃপর তোমাদের কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তার সময় অন্যান্য দিন।[সূরা বাকারা:১৮৫]
আয়াতে যে সকল মুসলমান রমজান মাস পাবে তাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যদি কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকে। সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের উপর রমজানের রোজা আবশ্যিক। তবে কোন অপারগতার কারণে রোজা রাখতে অক্ষম হলে তাকে সে রোজার কাজা করতে হবে।
যাদের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক নয়
● অপ্রাপ্ত বয়স: অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের উপর রোজা ফরজ নয় কিন্তু অভ্যাস গড়ার জন্য তাদেরকে রোজা পালনের আদেশ করা যাবে।
● অপ্রকৃতস্থ: প্রাপ্ত বয়স্ক হলেও অপ্রকৃতস্থ ব্যক্তির উপর রোজা ফরজ নয়। বিধান অনুযায়ী যার জ্ঞান লোপ পেয়েছে এবং যে অতি মাত্রায় মতিভ্রম হওয়ার কারণে ভাল-মন্দ তারতম্য করতে পারে না।
● বৃদ্ধ: বার্ধক্যে উপনীত এমন লোক যে ভাল-মন্দ পার্থক্য করতে পারে না, অতিমাত্রায় বার্ধক্যের কারণে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারে না।
● রোগী ও অক্ষম: বিশেষত এমন ব্যক্তি যে রোজা রাখতে শারীরিকভাবে সক্ষম নয়; অসুস্থতার কারণে কিছুক্ষণ পর পর ওষুধ গ্রহণ জরুরি, অন্যথায় অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এমন রোগী যার রোগমুক্তির সম্ভাবনা নেই। এরূপ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ফিদইয়া দেয়া ওয়াজিব।
● ঋতুবতী মহিলা: মাসিক বা ঋতুস্রাব অথবা সন্তান প্রসব জনিত স্রাব হলে উক্ত অবস্থায় রোজা না রেখে স্রাব চলে যাওয়ার পর কাজা করে নেবে।
● গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারী: গর্ভধারণ বা দুগ্ধপান করানোর কারণে যদি তাদের প্রতি রোজা রাখা কঠিন হয় বা স্বীয় সন্তানের অনিষ্টের আশঙ্কা থাকে তবে রোজা না রেখে যখন আশঙ্কামুক্ত হবে তখন সুবিধামত সময়ে কাজা করে নিবে।
● দুর্ঘটনা কবলিত লোককে রক্ষাকারী নিরুপায় ব্যক্তি: এমন ব্যক্তি যে রোজা ছেড়ে দিতে বাধ্য, যেমন কোন ছোট বাচ্চা পানিতে ডুবে গেছে অথবা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে তাকে মুক্ত করার জন্য রোজা ছেড়ে দিতে হলে ছেড়ে দেবে কিন্তু পরবর্তীতে তাকে কাজা করে নিতে হবে।
● মুসাফির: মুসাফিরের জন্য সফরে রোজা রাখা বা না রাখার এখতিয়ার আছে তবে যদি সফরে রোজা না রাখে তাহলে পরে এসব রোজা কাজা করে নেবে।
তবে বিনা কারণে সিয়াম ভঙ্গ করলে তার জন্য ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা. এর কয়েকটি হাদীস রয়েছে, ‘আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল ইরশাদ করেন, ‘একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের মুখ ফেটে গেছে আর তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? বলা হল, এরা ঐসব ব্যক্তি যারা বিনা কারণে রমজান মাসের সিয়াম ভঙ্গ করেছিল।
এসজে/এএস